বিবিধ প্ৰবন্ধ * مان বর প্রদান করিলাম ; এক্ষণে তোমাকে আর এক বর প্রদান করিতে ইচ্ছা করি ; তুমি একমাত্র বরের উপযুক্ত নহ। “দ্রৌপদী কহিলেন, হে মহারাজ ! সরথ সশরাসন ভীম, ধনঞ্জয়, নকুল ও সহদেবের দাসত্ব মোচন হউক। ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, হে নন্দিনি!! আমি তোমার প্রার্থনানুরূপ বর প্ৰদান করিলাম ; এক্ষণে তৃতীয় বর প্রার্থনা কর। এই দুই বর দান দ্বারা তোমার যথার্থ সৎকার করা হয় নাই, তুমি ধৰ্ম্মচারিণী, আমার সমুদায় পুত্রবধূগণ অপেক্ষা শ্ৰেষ্ঠ। “দ্রৌপদী কহিলেন, হে ভগবান! লোভ ধৰ্ম্মনাশের হেতু, অতএব আমি আর বর প্রার্থনা করি না। 'আমি তৃতীয় বর লইবার উপযুক্ত নাহি ; যেহেতু, বৈশ্যের এক বর, ক্ষত্ৰিয়পত্নীর দুই বর, রাজার তিন বর ও ব্রাহ্মণের শত বর লওয়া কৰ্ত্তব্য। এক্ষণে আমার পতিগণ দাসত্বরূপ দারুণ পাপপঙ্কে নিমগ্ন হইয়া পুনরায় উদ্ধত হইলেন, উহার পুণ্য কৰ্ম্মানুষ্ঠান দ্বারা শ্রেয়োলাভ করিতে পরিবেন।” এইরূপ ধৰ্ম্ম ও গর্বের সুসামঞ্জস্যই দ্রৌপদীচরিত্রের রমণীয়তার প্রধান উপকরণ। যখন জয়দ্ৰথ তাহাকে হরণ মানসে কাম্যাকবনে একাকিনী প্ৰাপ্ত হয়েন, তখন প্ৰথমে দ্রৌপদী তঁহাকে ধৰ্ম্মাচারসঙ্গত অতিথিসমুচিত সৌজন্যে পরিতৃপ্ত করিতে বিলক্ষণ যত্ন করেন ; পরে জয়দ্ৰথ আপনার দুরভিসন্ধি ব্যক্ত করায়, ব্যাস্ত্রীর ন্যায় গর্জন করিয়া আপনার তেজোরাশি প্ৰকাশ করেন। তঁহার সেই তেজোগর্ব বচনপরম্পরা পাঠে মন আনন্দসাগরে ভাসিতে থাকে। জয়দ্ৰথ তাহাতে নিরস্ত না হইয়া তাহাকে বলপূর্বক আকর্ষণ করিতে গিয়া তাহার সমুচিত প্ৰতিফল প্ৰাপ্ত হয়েন ; যিনি ভীমাৰ্জনের পত্নী, এবং ধৃষ্টদ্যুমের ভগিনী, তাহার বাহুবলে ছিন্নমূল পাদপের ন্যায় মহাবীর সিন্ধুসেীবীরাধিপতি ভূতলে পাতিত হয়েন । পরিশেষে জয়দ্ৰথ পুনর্বার বল প্ৰকাশ করিয়া ভঁাহাকে রথে তুলেন ; তখন দ্রৌপদী যে আচরণ করিলেন, তাহ নিতান্ত তেজস্বিনী বীরনারীর কাৰ্য্য। তিনি বৃথা বিলাপ ও চীৎকার কিছুই করিলেন না ; অন্যান্য স্ত্রীলোকের ন্যায় একবারও অনাবধান এবং বিলম্বকারী স্বামিগণের উদ্দেশ্যে ভৎসনা করিলেন না ; কেবল কুলপুরোহিত ধৌম্যের চরণে প্ৰণিপাতপূর্বক জয়দ্রথের রথে আরোহণ করিলেন। পরে যখন জয়দ্ৰথ দৃশ্যমান পাণ্ডবদিগের পরিচয় জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, তখন তিনি জয়দ্রথের রথস্থা হইয়াও যেরূপ গৰ্বিবত বচনে ও নিঃশঙ্কচিত্তে অবলীলাক্রমে স্বামীদিগের পরিচয় দিতে লাগিলেন, তাহা পুন: পুনঃ পাঠের যোগ্য।
