পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৮
বিবিধ কথা

মিথ্যা সংস্কার দূর হইল; যে অবস্থা ধারণা করিতে পারি না, জীবিতের পক্ষে যাহা অপরোক্ষ করা অসম্ভব—সেই চিরনির্ব্বাণ, সেই মহাশূন্য বা চরম পরিণাম যেন প্রত্যক্ষ করিলাম। ওই প্রাণহীন শবদেহও যতক্ষণ ধ্বংস না হয়, ততক্ষণ তাহা সত্য; সৃষ্টির মূল সত্য—যে মূর্ত্তি বা কায়া তাহা তখনও সম্মুখে বিদ্যমান। মনে হইল প্রাণ নাই, তবু সে আছে—প্রাণহীন সে; সে-হীন প্রাণ—যাহাকে আত্মা বলে, তাহা কল্পনা করিতেই পারিলাম না; যাহাকে হারাইলাম তাহার শেষ সত্য ওই দেহটা, তাই সেটাকে বুকে চাপিয়া ধরিলাম।

 ইহাই মৃত্যু—দেহ-বিযুক্ত আত্মার লোকান্তর-প্রাপ্তি নহে। মৃত্যুশোক বিরহ-দুঃখ নয়, কারণ মৃত্যু লোকান্তর-বাস নয়—অতলস্পর্শ শূন্যগহ্বর। যে আর নাই—তাহার সম্বন্ধে বিরহ-ভাব হয় কেমন করিয়া? কাহারও মৃত্যু যদি গভীরভাবে হৃদয়কে স্পর্শ করে, যদি তাহাকে এমন ভালবাসিয়া থাক যে তাহার অভাবে—তোমার কি হইল না ভাবিয়া— তাহার কি হইল ভাবিতে পার, তবেই মৃত্যুর স্বরূপ কতকটা উপলব্ধি করিতে পারিবে। যে মরিল সে যে আর নাই—এ কথা ভাল করিয়া গভীরভাবে উপলব্ধি করা দূরূহ; আমার জীবন-সংস্কার অর্থাৎ ‘আমি আছি’র সংস্কার সে পক্ষে প্রধান বাধা। এই সংস্কার যদি মুহূর্ত্তের জন্য ঘুচিয়া যায় তবে মৃত্যু সম্বন্ধে কোনরূপ কল্পনা-বিলাস আর টিঁকিতে পারে না। প্রাণসম প্রিয়জনের মৃত্যু-ঘটনা প্রত্যক্ষ করিয়া যখন মনে হয়—আমি আছি, আর, সে নাই; আমার বাঁচিয়া থাকার তুলনায় তাহার না-বাঁচার অবস্থা যখন তীব্রভাবে অনুভব করি, তখন এই ভাবিয়া মর্ম্মমূল ছিঁড়িয়া যায় যে, আমি যাহা ভোগ করিতেছি সে তাহা হইতে চিরতরে বঞ্চিত হইল। যে আয়ু অপেক্ষা পরম ধন আর নাই,