পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যু-দর্শন
২০৯

হইবে না যে, যে ব্যক্তির জীবন ধন্য হইয়াছে—তাহার মৃত্যু মৃত্যুই নয়; বরং, মনে হইবে, ওই ব্যক্তি সর্ব্বজীবের মতই আজ মৃত্যুর অধীন হইল—এ মুহূর্ত্তে তাহার নিজের পক্ষে সর্ব্ব কীর্তি, সর্ব্ব গৌরব বৃথা; তাহার কীর্ত্তির জন্য জীবিতেরা জয়ধ্বনি করিবে, কারণ সে কীর্ত্তির উত্তরাধিকারী তাহারা; কিন্তু ঐ যে প্রাণ-বুদ্বুদ অসীম শূন্যে বিলীন হইতেছে, উহার রহিল কি? নশ্বরতার হাত হইতে কোন্ কীর্ত্তি তাহাকে রক্ষা করিবে? সকল মিথ্যা অভিমান, মনোগত সংস্কার ত্যাগ করিয়া মুমূর্ষুর পানে চাহিয়া দেখ—তাহার মরজীবনের চরম লাঞ্ছনা, তাহার ক্ষণ-অস্তিত্বের চির-অবসান, নিয়তির নির্ম্মম অট্টহাস চাক্ষুষ করিতে পারিবে। জীবনের চেয়ে বড় কি আছে?—সেই জীবন হইতে বঞ্চিত হওয়ার যে নিদারুণ নিঃস্বতা, তাহা কি ওই ব্যক্তির পক্ষে সত্য নয়? সে কি কাহারও চেয়ে কম হতভাগ্য? মৃত্যুর আঘাতে তাহার মুখ কি কালিমালিপ্ত হয় নাই—তাহার মহাপ্রাণী কি শেষ মূহূর্ত্ত পর্য্যন্ত বাঁচিবার চেষ্টা করিবে না? চাহিয়া দেখ— মহামনীষী মহাপুরুষ বা মহাবীরের মৃত্যুও মৃত্যু; তাহার সেই মৃত্যুকালীন মুখচ্ছবি লক্ষ্য করিলে বুঝিতে পারিবে, মৃত্যুই চরম অভিশাপ, কোনও কীর্ত্তি কোনও গৌরব সে ক্ষতিপূরণ করিতে পারে না—যাইবার সময়ে তাহাকেও ভিখারীর মত যাইতে হইবে!

 মৃত্যুকে যথার্থরূপে উপলব্ধি করিতে হইলে হৃদয় দিয়া উপলব্ধি করিতে হয়—মস্তিষ্কের সাহায্যে, তত্ত্বজ্ঞানের দ্বারা নয়। যাহার প্রেম যত বড়, যাহার হৃদয়-বৃত্তি যত গভীর—সেই মৃত্যুকে তত সুস্পষ্ট দেখিতে পায়; সে সহজেই আত্মসংস্কার বিসর্জ্জন দিতে পারে বলিয়াই মৃত্যু তাহাকে ফাঁকি দিতে পারে না। মহাপ্রেমিক নহিলে নাস্তিক হইতে পারে