বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাঙালীর অদৃষ্ট

 বাঙালী জাতির পূর্ব্ব-ইতিহাস যতটুকু চোখে পড়ে, তাহা হইতে ইহাই মনে হয় যে, ব্যবহারিক জীবনের কোনও বৃহৎ সমস্যা এই জাতিকে কখনও কর্ম্মমন্ত্রে দীক্ষিত করে নাই; উর্ব্বর পলি-মৃত্তিকা ও বালুচরের উপর সে কখনও সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠাভূমি নির্ম্মাণের প্রয়াস করে নাই। জীবনের দিকটা কোনও রূপে নির্ব্বিঘ্ন হইলেই হইল; সংসার, সমাজ ও ধর্ম্মায়তনে যেখানে যেমন প্রয়োজন—দৃঢ়তা ও শৈথিল্য, নিয়মনিষ্ঠা ও ভাবাবেগ, তাহার জীবনে সমান মাত্রায় প্রশ্রয় পাইয়াছে। কল্পনা ও কূটতর্ক তাহার প্রাণের আরাম-স্থল, সেইখানে কোনও বাধা না ঘটিলেই হইল; সমাজে বা রাষ্ট্রজীবনে নব্যন্যায় ও নব্যস্মৃতির উদ্ভাবনা তাহাকে শান্ত ও সন্তুষ্ট রাখিয়াছে, তাহার মনোবৃত্তির উল্লাস ওইখানেই সমাপ্ত হইয়াছে—বাস্তবজীবনে ইহার অধিক কিছু করিতে হইলে মনোজীবনের শান্তি নষ্ট হয়! কিন্তু বিধাতা তাহার ধাতু-প্রকৃতির মধ্যে একটা নিদারুণ উৎপাতের বীজ নিহিত রাখিয়াছেন—বস্তুচেতনার দিকে সে যেমন অলস, ভাব-চেতনার দিকে সে তেমনই চঞ্চল ও স্পর্শকাতর। মার্জ্জিত ও সূক্ষ্ম বুদ্ধিবৃত্তি তাহাকে যেমন কর্ম্মবিমুখ, উদাসীন—জীবনযাত্রার যাবতীয় ব্যাপারে হৃদয়হীন করিয়া রাখিয়াছে, সে যেমন পল্লীসমাজের গণ্ডির মধ্যে পর্ণকুটীর আশ্রয় করিয়া অর্দ্ধনগ্ন দেহে যুগের পর যুগ কাটাইয়া দিতে পারে, অতিশয় ক্ষুদ্র বস্তুকেও বৃহৎ সমস্যার বিষয় করিয়া তাহারই সমাধানে পরম আত্মপ্রসাদ লাভ করিতে পারে,