বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২০
বিবিধ কথা

শাসন যেন পরধর্ম্মের মতই তাহার স্বাভাবিক স্ফূর্ত্তি রোধ করিয়াছিল। বৈষ্ণবের সেই নর-প্রীতি, সেই পুরাতন অধ্যাত্মবাদ ও তত্ত্বজিজ্ঞাসায় জটিল হইয়া উঠিল। জাতিনির্ব্বিশেষে বৈষ্ণবমাত্রেই পূজনীয় হইলেও, ব্রাহ্মণ-শাসিত সমাজে এই বৈষ্ণবপূজাও ব্রাহ্মণপূজার রূপান্তর হইয়া উঠিয়াছে; এবং এই প্রেমধর্ম্মের ফলে একটা দাস-মনোভাব সমস্ত জাতিকে আচ্ছন্ন করিয়াছে। তাই, এই রেনেসাঁসের মধ্যে বাঙালীর বাঙালীত্বের কতখানি উন্মেষ হইয়াছিল, এই নব-জাগরণ তাহার জীবনকে কতখানি জয়যুক্ত করিয়াছিল তাহা ভাবিয়া দেখিলে, ইহার অন্তরালেও একটা বিপুল ব্যর্থতার প্রমাণ মিলিবে। মনে হয়, এই জাতি যেন আত্মপ্রকাশ করিয়াও করিতে পারে নাই, নানা বিরুদ্ধ শক্তির তাড়নায় সে পরিশেষে বীর্য্যহীন হইয়া পড়িয়াছে—নানা জঞ্জাল ও আবর্জ্জনায় তাহার জীবনস্রোত রুদ্ধ হইয়া সমাজে, সাহিত্যে ও ধর্ম্মে কতকগুলি পল্বলের সৃষ্টি করিয়াছে।

 কিন্তু এ কথাও সত্য যে, ঐতিহাসিক কালের মধ্যে বাঙালী সেই একবার জাগিয়াছিল, এবং সেই একযুগের অর্জ্জিত ভাব-সম্পদ ও সাধনার বলে সে আরও তিন চার শত বৎসর পার হইয়া আসিয়াছে। ইতিমধ্যে এক দিকে মুসলমান শাসনের ফলে সমাজে যে নূতন ধরনের aristocracy-র অভ্যুদয় হইয়াছে, এবং অপর দিকে গুরু-ব্রাহ্মণের যে পূজা ক্রমশ সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়াছে—এক দিকে রাজপূজা ও অপর দিকে ভূদেবতার সম্মান, এই উভয়বিধ সংস্কারের চাপে বাঙালীর ভাবস্বাধীনতা লোপ পাইয়াছে, পূর্ণ আত্মবিস্মৃতি ঘটিয়াছে। জাতিহিসাবে সে তখন কান্যকুব্জাগত ব্রাহ্মণ ও কায়স্থের বংশধর,—সমুদ্রে বিন্দুবৎ যাহারা মিশিয়া গিয়াছিল, তাহাদের সেই আর্য্য-রক্তের গৌরব গুরু-ব্রাহ্মণ ও