বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>88 বিবিধ প্রবন্ধ । আপন পিতার সহিত বিবাদ করিয়া স্বগৃহ পরিত্যাগ পুৰ্ব্বক দেশান্তরে প্রস্থান করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন ।” - কথাটী যে ভাবে লেখা তাহাতে বোধ হয় যেন, রামমোহনের মনে “একমেবাদ্বিতীয়ং” এই জ্ঞানটা স্বতঃ উদ্ভূত হইয়াছিল, যেন তাহার পিতা রামমোহনের মুখে ঐ কথা শুনিয়া একেবারে তাহার প্রতি খড়গহস্ত হইয়াছিলেন এবং পিতার তাদৃশ ক্রোধ হওয়াতেই রামমোহনকে দেশাস্তরে প্রস্থান করিতে হইয়াছিল। কিন্তু বস্তুতঃ ওরূপ কিছুই হয় নাই । একেশ্বরবাদটী এদেশে নুতন মতবাদ নয়, রামমোহনের পিতাও তেমন অজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন না। রামমোহন নিজ পিতার আদেশানুসারে ফারসী পড়িয়া গোড়া মৌলবীদ্বিগের স্থানে সাধারণ হিন্দুশ্রাদ্ধাদিকে “পিশাচ পূজা” আখ্যায় নিন্দা করিতে শুনিয়াছিলেন, কিন্তু vকাশীধামে গিয়! শাস্ত্রোক্ত পুরশ্চরণও করিয়াছিলেন । তিনি মিশনরী সাজিয়া পরধৰ্ম্ম প্রচার করিতে প্রবৃত্ত হয়েন নাই । ফলকথা, ইহা প্রসিদ্ধই আছে যে, রামমোহন রায় নিজে একটী নুতন মতবাদের স্বষ্টি করিবেন এরূপ অভিমানে সম্বদ্ধ হয়েন নাই। কয়েক বৎসর গত হইল নগেন্দ্রনাথ বাবু তাহার পুস্তিকায় স্পষ্টীক্ষরেই বলিয়াছিলেন যে, রামমোহন রায় তন্ত্র শাস্ত্র হইতেই ব্রাহ্ম ধৰ্ম্মের মূল পত্তন করিয়াছিলেন। রামমোহনের ধৰ্ম্মসংস্কার যে আজি কালিকার সংস্কারকদিগের দ্যায় কেবল মন্ত্র অনুকরণ বা স্বেচ্ছাচারমূলক নহে, তাহার নিজের ইচ্ছা এবং কল্পনার উপর তিনি যে নির্ভর করেন নাই তাহা বিশেষ পরিষ্কার করিয়া দেখাইবার জন্ত এই প্রত্ৰখানি লিখিলাম । রামমোহন তন্ত্রশাস্ত্রের আলোচনা করিতে করিতেই জানিয়াছিলেন যে, কলাবাগমমুল্লঙ্ঘ্য যোহন্তমার্গে প্রবর্ততে । ন তস্ত গতিরস্তীতি সত্যং সত্যং ন সংশয়ঃ ॥ (মহানিৰ্ব্বাণ তন্ত্র ২য় উল্লাস ৯ শ্লোক ) কলিতে আগম উল্লঙ্ঘন করিয়া যিনি অন্যপথপ্রবৰ্ত্তিত হন, তাহার গতি নাই ; ইহা সত্য, এ ৰিষয়ে আর সংশয় নাই । তিনি ইহাও জানিয়াছিলেন যে, আগম অর্থাৎ তন্ত্রশাস্ত্রের মধ্যে মহানিৰ্ব্বাণ তন্ত্রই সকল তন্ত্রের সারাৎসার । যথা নগেযু হিমবান তারকাস্থ যথা শশী । ভাস্বান তেজঃস্থ তন্ত্ৰেষু তন্ত্ররাজমিদং তথা ।