বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
বিবিধ সমালোচন।

 কৃষ্ণ যেমন আধুনিক বৈষ্ণব কবিদিগের নায়ক, সেইরূপ জয়দেবে, ও সেইরূপ শ্রীমদ্ভাগবতে। কিন্তু কৃষ্ণচরিত্রের আদি শ্রীমদ্ভাগবতেও নহে। ইহার আদি মহাভারতে। জিজ্ঞাস্য এই যে মহাভারতে যে কৃষ্ণচরিত্র দেখিতে পাই, শ্রীমদ্ভাগবতেও কি সেই কষ্ণের চরিত্র? জয়দেবেও কি তাই? এবং বিদ্যাপতিতেও কি তাই? চারিজন গ্রন্থকারই কৃষ্ণকে ঐশিক অবতার বলিয়া স্বীকার করেন, কিন্তু চারিজনেই কি এক প্রকার সে ঐশিক চরিত্র চিত্রিত করিয়াছেন? যদি না করিয়া থাকেন তবে প্রভেদ কি? যাহা প্রভেদ বলিয়া দেখা যায়, তাহার কি কিছু কারণ নির্দ্দেশ করা যাইতে পারে? সে প্রভেদের সঙ্গে, সামাজিক অবস্থার কি কিছু সম্বন্ধ আছে?

 প্রথমে বক্তব্য, প্রভেদ থাকিলেই তাহা যে সামাজিক অবস্থাভেদের ফল, আর কিছু নহে, ইহা বিবেচনা করা অকর্ত্তব্য। কাব্যেই প্রভেদ নানাপ্রকারে ঘটে। যিনি কবিতা লিখেন, তিনি, জাতীয় চরিত্রের অধীন; সামাজিক বলের অধীন; এবং আত্মস্বভাবের অধীন। তিনটিই তাঁহার কাব্যে ব্যক্ত হইবে। ভারতবর্ষীয় কবি মাত্রেরই কতকগুলিন বিশেষ দোষ গুণ আছে যাহা ইউরোপীয় বা পারসিক ইত্যাদি জাতীয় কবির কাব্যে অপ্রাপ্য। সে গুলি তাঁহাদিগের জাতীয় দোষ গুণ। প্রাচীন কবি মাত্রেরই কতকগুলি দোষ গুণ আছে, যাহা আধুনিক কবিতে অপ্রাপ্য। সেই গুলি তাঁহাদিগের সামগ্রিক লক্ষণ। আর কবি মাত্রের শক্তির তারতম্য এবং বৈচিত্র্য আছে। সে গুলি তাঁহাদিগের নিজ গুণ।

 অতএব, কাব্য-বৈচিত্রের তিনটি কারণ—জাতীয়তা, সাময়িকতা এবং স্বাতন্ত্র্য। যদি চারিজন কবি কর্ত্তৃক গীত কৃষ্ণ চরিত্রে প্রভেদ পাওয়া যায়, তবে সে প্রভেদের কারণ তিন