বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ সমালোচন।
৩৭

তাঁহাকে অভিভূত করিল। রাম বাসন্তীকে বলিলেন, “সখি বাসন্তি। বুঝি অদৃষ্ট প্রসন্ন হইল!”

 বাসন্তী। কিসে?

 রাম। আর কি সখি! সীতাকে পাইয়াছি।

 বাসন্তী। কৈ তিনি?

 রাম। এই যে আমার সম্মুখেই রহিয়াছেন।

 বাসন্তী। মর্ম্মভেদী প্রলাপ বাক্যে আমি একে প্রিয়সখীর দুঃখে জ্বলিতেছি, তাহাতে আবার এমনতর এ হতভাগিনীকে কেন জ্বালাইতেছেন?

 রাম বলিলেন, “সখি, প্রলাপ কই? বিবাহকালে বৈবাহিক মঙ্গল সূত্রযুক্ত যে হাত আমি ধরিয়াছিলাম— আর যে হাতে অমৃতশীতল স্বেচ্ছালব্ধ সুখস্পর্শে চিনিতে পারিতেছি, এ ত সেই হাত! সেই তুহিন সদৃশ, বর্ষাকরকতুল্য শীতল কোমল লবলী বৃক্ষের নবাঙ্কুর তুল্য হস্তই আমি পাইয়াছি!

 এই বলিয়া রাম তাঁহার ললাটস্থ সীতার অদৃশ্য হস্ত গ্রহণ করিলেন। সীতা ইতিপূর্ব্বেই রামের আনন্দমোহ দেখিয়া অপসৃত হইবেন বিবেচনা করিয়াছিলেন; কিন্তু সেই চিরসদ্ভাবসৌম্য শীতল স্বামিস্পর্শে তিনিও মুগ্ধা হইলেন; অতি যত্নে সেই রামললাটস্থিতহস্তকে ধরিয়া রাখিলেও সে হস্ত কাঁপিতে লাগিল, ঘামিতে লাগিল, এবং জড়বৎ হইয়া অবশ হইয়া আসিতে লাগিল! যখন রাম, সীতার হস্তের চিরপরিচিত অমৃতশীতল সুখস্পর্শের কথা বলিলেন, সীতা মনে২ বলিলেন, “আর্য্যপুত্ত্র, আজিও তুমি সেই আর্য্যপুত্ত্রই আছ!” শেষে যখন রাম সীতার কর গ্রহণ করিলেন, তখন সীতা দেখিলেন স্পর্শ মোহে প্রমাদ ঘটিল। কিন্তু রাম সে হাত ধরিয়া রাখিতে পারিলেন না, আনন্দে তাঁহার ইন্দ্রিয় সকল অবশ হইয়া