বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ সমালোচন।
৪৯

 আমরা উত্তরচরিত নাটকের প্রকৃত সমালোচন করি নাই। পাঠকের সহিত আনুপূর্ব্বক নাটক পাঠ করিয়া যেখানেই ভাল লাগিয়াছে, তাহাই দেখাইয়া দিয়াছি। গ্রন্থের প্রত্যেক অংশ


    পর্ব্বতবৎ নিশ্চলভাবে দণ্ডায়মান, ইহা শ্রবণ করিয়া সীতাসহিত শীঘ্র আগমন করিলেন। সীতাও কৃতাঞ্জলি, বাষ্পাকুল নয়না এবং অধোমুখী হইয়া মনোমধ্যে রামকে চিন্তা করিতে২ সেই ঋষির পশ্চাৎ২ গমন করিতে লাগিলেন। ব্রহ্মের অনুগামিনী শ্রুতির ন্যায় বাল্মীকির পশ্চাদ্বর্ত্তিনী সেই সীতাকে দেখিবামাত্র সেই স্থলে অতি মহৎ সাধুবাদ হইতে লাগিল। তৎপরে দুঃখজ অতিমহৎ শোক হেতু ব্যথিতান্তঃকরণ জন সকলের বিপুল হলহলা শব্দ উত্থিত হইল। দর্শকবৃন্দমধ্যে কতকগুলি সাধু রাম, কতকগুলি সাধু জানকী ও কতকগুলি উভয়ই সাধু, এই প্রকার কহিতে লাগিল।
     তদনন্তর মুনিশ্রেষ্ঠ বাল্মীকি সীতা সহিত জনবৃন্দমধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া, রামকে এইরূপ বলিতে লাগিলেন। হে দাশরথি! ধর্ম্ম চারিণী, সুব্রতা, এই সীতা লোকাপবাদ হেতু আমার আশ্রম সমীপে পরিত্যক্তা হইয়াছিলেন। হে মহাব্রত রাম! ইনি এক্ষণে লোকাপবাদভীত তোমার নিকট প্রত্যয় প্রদান করিবেন; তুমি অনুজ্ঞা কর। এই দুই দুর্দ্ধর্ষ যমল জানকীপুত্ত্র তোমারই পুত্ত্র, ইহা আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি। হে রাঘব নন্দন! আমি প্রচেতার দশম পুত্ত্র, আমি মিথ্যা বাক্য স্মরণও করি না; ইহারা তোমারই পুত্ত্র। আমি বহু সহস্র বর্ষ তপস্যা করিয়াছি; যদ্যপি এই জানকী দুশ্চারিণী হয়েন তাহা হইলে আমি যেন তাহার ফলপ্রাপ্ত না হই। কায়োমনে এবং কর্ম্মদ্বারা আমি পূর্ব্বে কখনই পাপাচরণ করি নাই; যদ্যপি জানকী নিষ্পাপা হয়েন তবে আমি যেন তাহার ফলভোগ করিতে পারি। হে রাঘব! আমি পঞ্চভূত ওষষ্ঠ স্থানীয় মনেতে সীতাকে বিশুদ্ধা বিবেচনা করিয়াই বননির্ঝরে গ্রহণ করিয়াছিলাম। এই অপাপা পতিপরায়ণা শুদ্ধচারিণী, লোকাপবাদভীত তোমার নিকট প্রত্যয় প্রদান করিবেন। হে রাজনন্দন! যে হেতু তুমি তোমার এই প্রিয়তমাকে বিশুদ্ধা জানিয়াও লোকাপবাদ