পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किल्लग्न झल >¢ዓ বাড়ি যাই নাই আজ দেড় বছর। পলাশপাড়া আসিবার আগে কিছুদিন ছিলাম সত্ৰাজিংপুরে, তখন হইতেই যাই নাই। বাড়ি মানে শ্বশুরবাড়ি–নিজের বাড়িঘর বলিয়া কিছু” নাই অনেক দিন হইতেই। শ্বশুরবাড়ি যাইতে হইলে আট ক্রোশ হাটিয়া নাভারণ স্টেশনে রেলে চাপিতে হইবে। সেখান হইতে মসলম্বপুর স্টেশনে নামিয়া মোটরবাসে যাইতে হইবে খোলাপোতা। সেখানে মার্টিন লাইনের ছোট রেলে হাসনাবাদ পৰ্য্যন্ত গিয়া ইছামতীতে নৌকায় ছয় সাত ঘণ্টা গেলে তবে শ্বশুরবাড়ি। সবসুদ্ধ তিন চার টাকা খরচ পড়ে—যখনই হাতে টাকা আসিয়াছে, তখনই মনি-অর্ডার করিয়া মুবাসিনীর নামে পাঠাইয়া দিয়াছি—তিন চার টাকার মুখ একসঙ্গে কমই দেখিয়াছি আজ দু'বছরের মধ্যে। টাকা পাঠাইলে শাশুড়ী ঠাকুরুণের আর আমার বিধবা শালীর গঞ্জনার চোটে বেচারীকে অতিষ্ঠ হইয়া উঠিতে হয় । তাই এবার যখন আসি, খাওয়া-দাওয়া সারিয়া নৌকাতে চড়িব, মুবাসিনী কোণের ঘরে ডাকিয়া বলিল—শোন, এবার আমায় এখানে বেশীদিন ফেলে রেখো না—তুমি যেখানেই থাক, আমায় নিয়ে যেয়ো শীগ গীর। —সেই সব পাড়াগায়ে কি আর থাকতে পারবে ? –এই বা এমন কি শহর ? তা ছাড়া তুমি যেখানে থাকবে, সেইখানেই আমার শহর । এখানে দিদির বাক্যির জালায় এক এক সময় মনে হয় গলায় দড়ি দিই, কি গাঙে ডুবে মরি। —সবই বুঝি সুবি, আমার যদি একটুকু সংস্থান হয় কোথাও, তবে তোমাকে ঠিক সেখানে নিয়ে যাবো। আমিই কি তোমাকে আর কোথাও ফেলে মনের মুখে থাকি ভাবো ? তবে কি করি বল— দরজার বাহিরে পা দিয়াছি শাশুড়ী ঠাকুরুণ ওৎ পাতিয়া ছিলেন, বলিলেন—তুমি বাপু অমনি নিউদিশ হয়ে থেকে না গিয়ে । আমার এই অবস্থা, সংসারে একপাল কুপুস্কি, কোথা থেকে কি করি বল তো ? এক কঁাড়ি দুধের দেন গোয়ালার কাছে, ছেড়া কাপড় পরে পরে দিন কাটায়, মা হয়ে চোখের সামনে দেখতে পারিনে বলে এক জোড়া কাপড় কিনে এনে দিয়েছিলাম, তার দাম এখনও বাকী—তোমার তো বাপু এখান থেকে চলে গেলে আর চুলের টিকি দেখা যায় না—কি যে আমি করি, এমন পুরুষমানুষ বাপের জন্মে—ইত্যাদি ইত্যাদি । সেই অবস্থায় আসিয়া আজ দেড় বৎসর শ্বশুরবাড়ি-মুখে হই নাই। অবশ্য এর মধ্যে মাঝে মাঝে হাতে যখন যা আসিয়াছে, মুবাসিনীর নামে পাঠাইয়া দিয়াছি—কিন্তু সবসুদ্ধ ধরিলে খরচের তুলনায় তার পরিমাণ খুব বেশী তো নয়। কিন্তু আমি কি করিব, চুরি-ডাকাতি তে করিতে পারি না । সত্যই মুবাসিনীকে বিবাহ করিয়া পৰ্য্যন্ত বেশী দিন তাহার সঙ্গে একত্র থাকিবার সুযোগ আমার হয় নাই। প্রথম প্রথম ভাবিতাম, একটা কিছু সুবিধা হইলেই তাহাকে লইয়া গিয়া কাছে রাখিব । কিন্তু বিবাহ করিয়াছি আজ ছয় সাত বছর, তার মধ্যে এ সুযোগ কখনও হইল না। শ্বশুরবাড়িতেই বা গিয়া কয়দিন থাকা যায়, একে তো মেয়ে এতকাল ধরিয়া রহিয়াছে, তার উপর জামাই গিয়া দুদিনের বেশী দশদিন থাকিলেই শাশুড়ী ঠাকুরুণ স্পষ্ট বিরক্ত হইয়া উঠেন বেশ বুঝিতে পারি, কাজেই বুদ্ধিমানের মত আগেই সরিয়া পড়ি। নিজের মান নিজের কাছে । একদিন শুনিলাম পানখোলার পাঠশালার একজন মাস্টারের পোস্ট খালি আছে। মুজিবর রহমানের দোকানে সকালে বিকালে বসিয়া দুই একটা মুখ-দুঃখের কথা বলি, লে আমার পরামর্শ দিল, মাস্টারির জন্তে চেষ্টা দেখিতে।