পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిe বিভূতি-রচনাবলী তহশীলদার সজ্জন সিং বলে—পণ্ডিতজী লোকটা বদ্ধ পাগল। কি করছে দেখুন হুজুর ! মাস-দুই এইভাবে কাটে। শূন্ত ঘরে মটুকনাথ সমান উৎসাহে টোল করিয়া চলিয়াছে। একবার সকালে, একবার বৈকালে। ইতিমধ্যে সরস্বতী পূজা আসিল । কাছারিতে দোয়াতপূজার দ্বারা বাগেবীর অর্চনা নিম্পন্ন করা হয় প্রতি বৎসর, এ জঙ্গলে প্রতিমা কোথায় গড়ানো হইবে ? মটুকনাথ তার টোলে শুনিলাম আলাদা পূজা করিবে, নিজের হাতে নাকি প্রতিমা গড়িবে। ষাট বছরের বৃদ্ধের কি ভরসা, কি উৎসাহ ! নিজের হাতে ছোট প্রতিমা গড়িল মটুকনাথ । টোলে অfলাদা পূজা হইল। বৃদ্ধ হাসিমুখে বলিল—বাবুজী, এ আমাদের পৈতৃক পুজো । আমার বাবা চিরকাল তার টোলে প্রতিমা গড়িয়ে পুজো করে এসেছেন, ছেলেবেলার দেখেছি। এখন আবার আমার টেগলে— কিন্তু টোল কই ? মটুকনাথকে একথা বলি না অবশু। Nව সরস্বতী পূজার দিন-দর্শবারো পরে মটুকনাথ পণ্ডিত আমাকে আসিয়া জানাইল, তাহার টোলে একজন ছাত্র আসিয়া ভৰ্ত্তি হইয়াছে। আজই সে নাকি কোথা হইতে আসিয়া পৌছিয়াছে। মটুকনাথ ছাত্রটিকে আমার সামনে হাজির করাইল । চোদ-পনেরো বছরের কালে শীর্ণকায় বালক, মৈথিলী ব্রাহ্মণ, নিতান্ত গরীব, পরনের কাপড়খানি ছাড়া দ্বিতীয় বস্ত্র °र्षांख बांझे । মটুকনাথের উৎসাহ দেখে কে । নিজে খাইতে পায় না, সেই মুহূৰ্ত্তে সে ছাত্রটির ভরণপোষণের ভার গ্রহণ করিয়া বসিল । ইহাই তাহার কুলপ্রথা, টোলের ছাত্রের সকল প্রকার অভাব-অনটন এতদিন তাহীদের টোল হইতে নিৰ্ব্বাহ হইয়া আসিয়াছে ; বিদ্যা শিখিবার অাশায় যে আসিয়াছে, তাহাকে সে ফিরাইতে পরিবে না। মাস দুইয়ের মধ্যে দেখিলাম, আরও দু-তিনটি ছাত্র জুটল টোলে। ইহার এক বেলা খায়, এক বেলা খায় না। সিপাহীরা চাদ করিয়া মকায়ের ছাতু, আটা, চীনার দানা দেয়, কাছারি হইতে আমিও কিছু সাহায্য করি। জঙ্গল হইতে বাখুয়া শাক তুলিয়া আনে ছাত্রেরা–তাঁহাই সিদ্ধ করিয়া হয়ত একবেল কাটাইয় দেয়। মটুকনাথেরও সেই অবস্থা। রাত দশট-এগারোটা পৰ্য্যন্ত মটুকনাথ শুনি ছাত্র পড়াইতেছে টোল ঘরের সামনে একটা হরীতকী গাছের তলায়। অন্ধকারেই অথবা জ্যোৎস্নালোকে—কারণ আলো জালাইবার তেল জোটে না ।