পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনে-পাহাড়ে 8X6. কিছু হয় নি দেখছি। এই গ্রামের নামটা কি ? —খানাকুই । —কত দিনের আশ্রম আপনার ! আছেন কতদিন এখানে ? —তা প্রায় আট-ন বছর । শিষ্য আছে জন-দুই কলকাতায়—তারাই আশ্রমের ঘর তৈরী করে দিয়েছে—মাসিক কিছু সাহায্যও করে। —এ বনের মধ্যে ভাল লাগে ? --আছি বেশ । গ্রামের লোকের বড় জলকষ্ট । শিষ্যদের বলে আশ্রমে একটা পাতকুয়ে করে দিয়েছি, গ্রামের সবাই জল নিয়ে যায়। তবে খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট, কিছু মেলে না এ সব গারে। কপি আর টেমাটোর ক্ষেত করেছি ঐ দেখুন। ঐ ভরসা। তাও গরমকালে জলাভাবে সব শুকিয়ে যায়। দারুন জলাভাব। বসে গল্প করছি, গেরুয়া, কাপড় পর একজন সন্ন্যাসিনী এসে এক পেয়ালা চা দিয়ে গেলেন। সন্ন্যাসী বললেন, মা ঠাককণ। বললাম—ও, আপনার মা ? * —না, আমার শিস্য । ওঁরও কেউ নেই। বাকুন্ডা জেলায় বার্ডী । ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে । আমি কাছে নিয়ে এসে রেখে দিয়েছি আজ পাচ বছর । আমার রান্না করে দেন। আশ্রমের কাজকৰ্ম্ম করেন । —কেউ নেই? —প্রশ্নটা যেন আপন মনেই জিজ্ঞেস করি। সংসারে যার কেউ নেই, এই ভাবেই কোথাও না কোথাও তার আশ্রয় জুটে যার বৈ-কি। ভগবানই জুটিয়ে দেন । সন্ন্যাসী বলছিলেন—আমার পাশে জমি কিনে রেখেছে কলকাতার একজন নাস। তারও কেউ নেই। সে আমার শি" fও নয়। অথচ এই আশ্রম দেখে আর মা ঠাকরুণকে দেখে বলেছে, এইখানেই আমার থাকা সুবিধে হবে । এইবার বোমার হাঙ্গামার সময়ে এসে আমার এখানে কিছুদিন ছিল। —জমি পাওয়া যায় ? —কেন যাবে না, নেবেন ? আমার একটা খারাপ অভ্যেস, যেখানে যত ভাল জায়গা দেখবো, সেখানেই আমার ইচ্ছে হবে যে বাড়ী তৈরি করি। সুতরাং অন্যমনস্কভাবে বলেই ফেললাম—ইচ্ছে তো আছে। —স্থ্য, হ্যা, আসুন না! জমি আমিই দিচ্ছি। ঘরদোর আপাততঃ আমার আশ্রমের মত খড়েরই কবন, সস্তায় হবে । —বেশ, তবে ঘর তৈরির দেখাশুনো আপনাকে করতে হবে। আমি তো কালই চলে যাচ্ছি, টাকা পাঠিয়ে দেবো । সেই জ্যোৎস্নাহ্মাত শালবন ও উদাস প্রান্তরের মধ্যে বসে আমি যেন ক্ষণকালের জন্ত সেখানকার অধিবাসী হয়ে গিয়েছি মনে হলো । কি মুন্দর হবে যখন এখানে নিজের ঘরের সামনে বসে থাকবো এমনি নির্জন রাত্রির জ্যোৎস্নার মধ্যে ।