পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোহারডাগা Tঐ সকল সর্দারের এখন স্বদেশে ও স্বসমাজে পূৰ্ব্বৰং পূজ্য। তথায় ইংরাজরাজের স্বশাসন বিস্তৃত হইলেও, মুণ্ড বা ওরাওন-নেতৃগণের কর্তৃত্বের বিশেষ কিছুই খৰ্ব্বতা ঘটে নাই । তবে ইংরাজরাজত্বে বাস করিয়া জায় তাহারা পূৰ্ব্ববং রণজয়ে অথবা লুণ্ঠন দ্বারা লন্ধ বন্দীকে নৃশংসরুপে হত্য, ও অমানুষিক মহিষোৎসর্গ প্রভৃতি পাশবিক অত্যাচারের অনুষ্ঠান করিতে সমর্থ নহে। বৃটশ গবর্ণমেণ্টের কঠোর শাসনে তাহার এখন শাস্তু শিষ্ট । অনুমান ১৬১৬ খৃষ্টাব্দে মোগলসম্রাট জাহাঙ্গীর বাদশাহের রাজ্যকালে মোগল-সৈন্ত কোত্ৰণ ( আসল ছোট নাগপুর) অধিকার করে। ঐ সময়ে এখানকার কোন কোন নদীতে হীরক পাওয়া গিয়াছিল। যুদ্ধবিজয় এবং হীরক প্রাপ্তির সংবাদে দিল্লীর রাজদরবারে মহাসমারোহে আনন্দোল্লাস হইয়াছিল। ইতিহাস হইতে জানা যায় যে, উক্ত ঘটনার পর ১৬৪৯.৬০ খৃষ্টাদের মধ্যে মুসলমানগণ কএকবার উপযুপিরি পালামে আক্রমণ করিলে বিফলমনোরথ হন, অবশেষে শেষোক্ত বর্ষে দাউদ খা পালামে দুর্গ আক্রমণ ও অধিকার করেন। তাহার বংশধরগণ ঐ দুর্গ মধ্যে ৩০ x ১২ ফিট আয়তন একখানি সুবৃহৎ চিত্রপটে তাহার আক্রমণ-কৌশল বিবৃত করিয়া রাখিয়াছেন।. উহার তাঙ্কন-পরিপাট্য সাধারণের দেখিবার জিনিষ । দাউদ কর্তৃক পালামে দুর্গ-জয়ের পর হইতে ১৭২২ খৃষ্টাব্দ পৰ্য্যন্ত এখানে আর ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখা যায় না । শেষোক্ত বর্ষে স্থানীয় সামন্তরাজ রণজিৎ রায় গুপ্তভাবে নিহত হন এবং তাহারই কনিষ্ঠ ভ্রাতৃপুত্র জয়কৃষ্ণ রায় গদীতে উপবিষ্ট হইয়াছিলেন । কিছুদিন রাজ্যমুখ সম্ভোগ করিয়া জয়কৃষ্ণ একটী ক্ষুদ্রযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন করেন । তদনন্তর তাহার পত্নী ও পরিবারস্থ সকলে বেহার প্রদেশের অন্তর্গত মেগ রা নামক স্থানে আসিয়া তথাকার কানুনগো উদ্ভবস্ত রায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন। উগ্ৰবন্ত রায় ১৭৭০ খৃষ্টাব্দে মৃত রাজা রণজিৎ রায়ের পৌত্র গোপাল রায়কে পাটনায় আনিয়াছিলেন, পরে তিনি গোপাল রায়কে সঙ্গে লইয়া তথাকার ইংরাজ এজেন্ট কাপ্তেন কাৰ্ণাকের সমক্ষে উপস্থিত হইয়া তাহাকে পালামেীরাজের যথার্থ উত্তরাধিকারী বলিয়া ঘোষণা করেন। কানুনগোর প্রার্থনায় কাপ্তেন কার্ণক গোপাল রায়ের রাজ্যপ্রাপ্তি পক্ষে ইংরাজগবর্ণমেণ্টের পক্ষে সাহায্য করিতে স্বীকৃত হন। তিনি তৎকালীন পালামেী-রাজকে পরাজিত করিয়া গোপাল রায় ও তাঁহার অপর দুই ভ্রাতাকে পাঁচ বৎসরের সনদ দিয়া তদেশ পরিত্যাগ করেন । তদবধি পালামে বিভাগ ইংরাজাধিকৃত রামগড় জেলার অন্তভূক্ত হয়। এই ঘটনার দুই বৎসর পরে, [ ७२१ ] লোহারডাগা কানুনগো উগ্ৰস্তু রায়ের হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অপরাধে বিশ্বাসঘাতক গোপাল রায় কারারুদ্ধ হন এবং বসন্ত রায় গদীতে আরোহণ করেন। ১৭৮৪ খৃষ্টাব্দে, পাটনানগরে গোপালরায়ের মৃত্যু ঘটে ; ঐ বৎসরই রাজা বসন্তরায় পরলোকগত হইলে চূড়ামণ রায় রাজ্যাধিকার লাভ করেন। তিনি ১৮১৩ খৃষ্টাব্দে ঋণজালে জড়িত হইয়া পড়েন। তজ্জন্ত বাকী খাজনার দাবিতে পালামে৷ সম্পত্তি বিক্রয় হইয়া যায় এবং বৃটিশ গবর্ণমেণ্ট রাজস্ব বাবত উহ স্বয়ং খরিদ করেন । গয়াজেলার অন্তর্গত দেওবিভাগের রাজা ফতেনারায়ণ সিংহের সাহায্যলাভে উপকৃত হইয়া ইংরাজগবর্ণমেণ্ট প্রত্যুপকার ও পুরস্কার স্বরূপ ১৮১৬ খৃষ্টাব্দে তাহাকে পালামে সম্পত্তি জায়গীর স্বরূপ দান করেন। রাজা ফতে নারায়ণ সুশৃঙ্খলে রাজস্ব আদা করিতে পারেন নাই। তিনি বলপূৰ্ব্বক নানা অত্যাচার করিয়া প্রজার সৰ্ব্বস্ব অপহরণ করিলে প্রজাবৰ্গ তাহার বিদ্রোহী হইয়া উঠে । ১৮১৮ খৃষ্টাব্দে ইংরাজগবৰ্ণমেণ্ট দানপত্রের সর্ত রহিত করিয়া ঐ সম্পত্তি পুণরায় গ্রহণ করেন এবং রাজাকে ক্ষতিপূরণস্বরূপ তাহার বেহারন্থ সম্পত্তি হইতে বার্ষিক ৩ সহস্র মুদ্র রাজস্ব কমাইয়া দেন। ইংরাঞ্জ-গবর্ণমেণ্টের শাসনাধীনে আসিবার পর, পালামে৷ শাস্তভাব ধারণ করিয়াছে। ১৮৩১ খৃষ্টাব্দে ছোট নাগপুরে কোলবিদ্রোহ উপস্থিত হয়। ইছাই ইতিহাসে "চুয়াড় বিদ্রোহ” নামে খ্যাত। ছোট নাগপুরের মহারাজের আত্মীয় ও অনুচরগণের অত্যাচারই এই বিদ্রোহের কারণ। ১৮৩২ খৃষ্টাব্দে মার্চ মাসে ইংরাজের যত্নে উহ থামিয়া যায় । [ মানভূম দেখ। ] এই ভীষণ বিদ্রোহে কোলগণ এরূপ উত্তেজিত হইয়াছিল যে, অসংখ্য নরশোণিত পাতে তাহ প্রশমিত হয় নাই। বহুসংখ্যক গ্রাম লুষ্ঠিত ও দঃ এবং নররক্তে কলুষিত হইবার পর গঙ্গানারায়ণ প্রভৃতি দমু্যদলনেতা ইংরাজহস্তে পরাজিত হইলেও আত্মসমর্পণ করে নাই। এই ঘোর সংঘর্ষের সময় কোলগণ উন্মত্ত পাদবিক্ষেপে এখানকার পাৰ্ব্বত্য প্রদেশ আলোড়িত করিলেও পালামে বিভাগের কোন ক্ষতি হয় নাই ; কিন্তু এই বিদ্রোহের পর, ইংরাজ-গবর্ণমেণ্টের শাসনবিভাগীয় যে সকল পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে, তাহ হাজারিবাগ জেলার বিবরণী মধ্যে বিবৃত হইল। [ হাজারিবাগ দেখ। ] উপরোক্ত. চুয়াড়-বিদ্রোহের অব্যবহিত পরেই চেরো ও খরবার জাতি বিদ্রোহী হইয়া উঠে। ১৮৩২ খৃষ্টাব্দে অবিলম্বে তাহা থামিয়া যায়। তদবধি ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ পর্য্যস্ত এখানে আর কোনরূপ বিপৎপাত হয় নাই। উক্ত বর্ষে ধরবার জাতি স্থানীয় রাজপুত ভূম্যধিকারীর বিরুদ্ধে অভূখিত হয় ।