পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৌদ্ধসাধনা

অবস্থা কি না জোর করিয়া তাহা বলা চলে না। অধ্যাত্মতত্ত্ব-সম্বন্ধে বুদ্ধের নিস্তব্ধতা আলোচনা করিয়া কেহ কেহ মনে করেন, যে মানববুদ্ধি আধ্যাত্মিকতার যে উচ্চতম অবস্থা কল্পনা করিতে পারে, তাহার বাহিরে অতি উচ্চতম অবস্থাও আছে ইহা স্বীকার করিতেই হইবে। বুদ্ধের অনন্ত-প্রসারী আধ্যাত্মিক দৃষ্টি নির্ব্বাণের সীমাহীন আকাশ ভেদ করিয়া পরপারে উত্তীর্ণ হইয়াছিল, তাঁহার নিস্তব্ধতাই ইহার একটি প্রমাণ। তিনি তাঁহার অনুগত ভক্ত ও সাধারণ লোকের দৃষ্টির সম্মুখে শান্তি ও কল্যাণের আকর নির্ব্বাণ-লোক উপস্থাপিত করিয়া সন্তুষ্ট ছিলেন; সে লোক অতিক্রম করিয়া কোন্‌ লোক রহিয়াছে তাহা বলেন নাই।

 বুদ্ধের এই নির্ব্বাণ সাধনার একটি চমৎকার বিশেষত্ব আছে। তিনি সাধকের সম্মুখে একটি সুনির্দ্দিষ্ট পথ চিত্রিত করিয়া দিয়াছেন, সাধক এই পথে একমাত্র আত্মশক্তির উপর নির্ভর করিয়া চলিবেন বটে, কিন্তু তাঁহাকে কোথাও অনিশ্চিতত্বের মধ্যে পড়িয়া ঘুরিয়া মরিতে হইবে না। সাধকের চলিবার বলিবার ভাবিবার ধ্যান করিবার মনন করিবার, সময় বিষয়গুলি সুনির্দ্দিষ্ট এবং ধারাবাহিকরূপে সুবিন্যস্ত। কল্যাণপথগামী সাধককে যতখানি ইঙ্গিত করিলে তিনি তাঁহার লক্ষ্যস্থানে উত্তীর্ণ হইতে পারেন তিনি তাঁহাকে ততখানিই ইঙ্গিতে জানাইয়াছেন। রোগীকে তিনি ঔষধ দিয়াছেন, হয়ত অনাবশ্যক বোধে তাহাকে তাহার ব্যাধির মূলকারণটি বলেন নাই। জিজ্ঞাসিত হইয়াও বুদ্ধদেব অনেক দুর্জ্ঞেয় তত্ত্বের রহস্যসম্বন্ধে নিরুত্তর ছিলেন; তাঁহার সেই নিস্তব্ধতা নিন্দুকদলের আক্রমণের একটি বিষয় হইয়াছে সন্দেহ নাই। তা’

১২৭