পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অক্ষয়কুমার দত্ত
অক্ষয়কুমার বড়াল

ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সার্থক সুত্রপাত করিয়া তিনি। আধুনিক বাংলা গদ্যরীতির যে বিশেষ পরিপুষ্টি সাধন করিয়া গিয়াছেন, তাহার জন্য বাংলা সাহিত্যে তিনি চিরস্মরণীয়। তাঁহার গদ্য রচনা স্পষ্ট, তথ্যনিষ্ঠ, যুক্তিনির্ভর ও প্রসাদগুণযুক্ত। প্রথমদিকে দেবেন্দ্রনাথ ও বিদ্যাসাগর তাঁহার রচনার কিছু কিছু সংশােধন করিয়া দিলেও, শীঘ্রই উহার প্রয়ােজন অতীত হয়। তাঁহার ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’ (প্রথম ভাগ, ১৮৫১ খ্ৰী ; দ্বিতীয় ভাগ, ১৮৫৩ খ্রী) ও ‘ধর্মনীতি’ (১৮৫৬ খ্রী) শীর্ষক পুস্তকদ্বয়ে তিনি অতি সুশৃঙ্খল যুক্তিনিষ্ঠ আলােচনা করিয়াছেন। প্রথমােক্ত গ্রন্থটি জর্জ কুম্ব রচিত ‘কনষ্টিটিউশন অফ ম্যান’ নামক পুস্তক অবলম্বনে রচিত হইলেও হুবহু উহার অনুবাদ নহে। দ্বিতীয় পুস্তকখানি নানা ইংরেজী গ্রন্থ অবলম্বনে লিখিত। প্রথম গ্রন্থে তিনি ইংরেজী শব্দ অবলম্বনপূর্বক বাংলায় যে পরিভাষাসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন, বর্তমান সময়ের সরকারি ও বেসরকারি পরিভাষা নির্মাণকার্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাহা কৌতূহলােদ্দীপক ও মূল্যবান। বাল্যশিক্ষার ক্ষেত্রে তাহার ‘চারুপাঠ’ ( প্রথম ভাগ, ১৮৫৩ খ্ৰী ; দ্বিতীয় ভাগ, ১৮৫৪ ঐ ; তৃতীয় ভাগ ১৮৫৯ খ্র) তৎকালে এক যুগান্তর আনিয়াছিল। ভারতবর্ষীয় উপাসক-সম্প্রদায়’ ( প্রথম ভাগ ১৮৭০ খ্রী ; দ্বিতীয় ভাগ ১৮৮৩ খ্রী) নামক অসাধারণ পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থটি তঁাহার শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলা যায়। বাংলা ভাষায় এই জাতীয় গ্রন্থরচনার ইহাই প্রথম সার্থক প্রয়াস। প্রধানতঃ এশিয়াটিক রিসার্চেস' পত্রিকার যােড়শ ও সপ্তদশ খণ্ডে প্রকাশিত হােরেস হেম্যান উইলসনের ‘স্কেচ অফ দি রিলিজিয়াস সেক্টস অফ দি হিন্দুস’ নামক প্রবন্ধদ্বয় অবলম্বন করিয়া গ্রন্থটি রচিত হইলেও ইহাতে অক্ষয়কুমারের মৌলিক গবেষণাও যথেষ্ট বর্তমান। তাহার প্রাচীন হিন্দুদিগের সমুদ্রযাত্রা ও বাণিজ্যবিস্তার’ও ( গ্রন্থকারের মৃত্যুর পর তাঁহার পুত্র রজনীনাথ দত্তের সম্পাদনায় ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত) এই জাতীয় একখানি মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ। তাহার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে শ্ৰীযুক্ত ডেবিড হেয়ার সাহেবের নাম স্মরণার্থ তৃতীয় সাম্বৎসরিক সভার বক্তৃতা’ (১৮৪৫ খ্র); ‘বাষ্পীয় রথারােহীদিগের প্রতি উপদেশ’ ( ১৮৫৫ খ্র); ‘ধর্মোন্নতি সংসাধন বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৫৫ খ্র) ও ‘পদার্থ বিদ্যা’ ( ১৮৫৬ খ্রী) উল্লেখযােগ্য। বঙ্গসাহিত্যের সুপরিচিত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত অক্ষয়কুমারের পৌত্র।


দ্ৰ নকুড়চন্দ্র বিশ্বাস, অক্ষয়চরিত, কলিকাতা, ১২৯৪
বঙ্গাব্দ ; মহেন্দ্রনাথ রায় বিদ্যানিধি, শ্ৰীযুক্ত বাবু অক্ষয়কুমার দত্তের জীবনবৃত্তান্ত, কলিকাতা, ১২৯২ বঙ্গাব্দ ; হরিমােহন মুখােপাধ্যায়, বঙ্গভাষার লেখক, প্রথম খণ্ড, কলিকাতা, ১৯০৪ খ্ৰী ; শিবনাথ শাস্ত্রী, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, কলিকাতা, ১৯০৪ খ্ৰী ; রাজনারায়ণ বসু, বাঙ্গালা ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক বক্তৃতা, কলিকাতা, ১৮৭৮ খ্ৰী ; মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী, চতুর্থ সংস্করণ, কলিকাতা, ১৯৬২ খ্রী ; ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্যসাধক-চরিতমালা ১২, কলিকাতা ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ ; সুকুমার | সেন, বাংলা সাহিত্যে গদ্য, ১৩৪১ বঙ্গাব্দ।
সুশীলকুমার গুপ্ত

অক্ষয়কুমার বড়াল ( ১৮৬০-১৯১৯ খ্রী) কবি অক্ষয়কুমার বড়াল কলিকাতা চোরবাগানে ১৮৬০ খ্ৰীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতার নাম কালীচরণ বড়াল। অক্ষয়কুমারের শিক্ষা আরম্ভ ও শেষ হয় হেয়ার স্কুলে। কিছুদিন দিল্লী অ্যাণ্ড লণ্ডন ব্যাঙ্কের হিসাব-বিভাগের কাজ করিয়া পরে তিনি নর্থ ব্রিটিশ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানিতে প্রবেশ করেন। মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি এখানে প্রধান কর্মচারীরূপে কাজ করেন। ১৩২৬ বঙ্গাব্দে ৪ আষাঢ় ( ১৯ জুন ১৯১৯ খ্রী) তিনি পরলােকগমন করেন। | অক্ষয়কুমারের প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘রজনীর মৃত্যু বঙ্গদর্শনে ( অগ্রহায়ণ ১২৮৯ ) বাহির হইয়াছিল। তাঁহার | প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ-প্রদীপ’ (১৮৮৪ খ্রী), ‘কনকাঞ্জলি’ (১৮৮৫ খ্রী), ‘ভুল’ (১৮৮৭ খ্ৰী ), শঙ্খ ( ১৯১০ খ্রী) এবং এষা' (১৯১২ খ্রী)। | অক্ষয়কুমার রাজকৃষ্ণ রায়ের কবিতা’ ( ১৮৮৭ খ্র ) এবং গিরীন্দ্রমােহিনী দাসীর ‘অশ্রুকণা’র (১৮৮৭ খ্ৰী ) | কবিতা নির্বাচনেও সহায়তা করিয়াছিলেন। এতদ্ব্যতীত | ‘পান্থ’ নামক একটি কাব্যের তিনটি পর্যায় ১৯০৪ হইতে ১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দের সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিল। কবি হিসাবে রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক হইয়াও অক্ষয়কুমার বাংলা কাব্যে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। তিনি ছিলেন বিহারীলালের শিষ্য । রবীন্দ্রনাথের ন্যায় তিনিও বিহারীলালের নিকট হইতে আত্মগত কল্পনামূলক প্রেম ও সৌন্দর্যবাদের দীক্ষা পাইয়াছিলেন। রবীন্দ্রনাথের প্রথম যৌবনের কবিতার ন্যায় তাহার কবিতাতেও বাস্তববিচ্ছেদের জন্য দুঃখের সুর বর্তমান। মৃত পত্নীর স্মৃতিতে লিখিত ‘এ’র যুগে আসিয়া আবার গার্হস্থ্য-জীবনের মধ্যেই তিনি তৃপ্তি খুঁজিয়াছেন। শব্দচয়নে বাক্যগঠনে অর্থের পরিমিতি রক্ষায় তিনি সতর্ক ও ক্ল্যাসিকধর্মী।