পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মু খ ব ন্ধ


 প্রসিদ্ধ ফরাসী বিশ্বকোষ ‘আসিলোপেদি’তে দিদেৱে লিখিয়াছিলেন, পৃথিবীময় যে জ্ঞান ছড়াইয়া আছে তাহা সমাহৃত ও সুবিন্যস্ত করা বিশ্বকোষের উদ্দেশ্য; উক্ত জ্ঞানের মর্ম সমকালীন জনসমষ্টির নিকট ব্যাখ্যাত করা ও ভবিষ্যদ্বংশীয়ের হাতে উহা পৌছানোর ব্যবস্থা করা কোষগ্রন্থের লক্ষ্য। বিগত শতাব্দীর জ্ঞানচর্যা যেন অনাগত যুগের প্রয়োজনে লাগে; উত্তরপুরুষ যেন আমাদের অপেক্ষা জ্ঞানী হইয়া আমাদের অধিক সৎ ও সুখী হইতে পারেন।

 ইহাই সকল কোষগ্রন্থের মর্মবাণী। বস্তুতঃ আধুনিক কালে জ্ঞানবিজ্ঞানের দ্রুত ও বিস্ময়কর প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বকোষ জাতীয় গ্রন্থের উপযোগিতা আরও বাড়িয়াছে। মধ্যযুগের মত একালে কোনও একজন ব্যক্তির পক্ষে সর্ববিদ্যাপারংগম হওয়া আর সম্ভবপর নহে। কোনও কোনও লেখক জল্পনা করিয়াছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগেও মানবজ্ঞানের যে পরিসীমা ছিল লাইবনিটুসের (১৬৪৬-১৭১৬খ্রী) মত কোনও অসাধারণ ধীশক্তির অধিকারী হয়ত জীবনব্যাপী একনিষ্ঠ অধ্যবসায়ের দ্বারা তাহা অধিগতকরিতে পারিতেন। এ দাবি কতদূর সত্য তাহা বলা কঠিন। কিন্তু ঠিক তাহার অব্যবহিত পরেই বিশ্ববিদ্যার পরিধি এত দূর সম্প্রসারিত হইয়াছে যে তাহাতে সম্পূর্ণ ব্যুৎপত্তি লাভ করা কাহারও সাধ্যায় নহে। জ্ঞানবিজ্ঞানের এই অতি দ্রুত বিকাশের সহিত আধুনিক কালে আর একটি লক্ষণ দেখা দিয়াছে: ‘স্পেশালাইজেশন বা বিশেষজ্ঞতা অর্জনের অনুশীলন। ফলে এযুগে সর্বজ্ঞ তো দুর্লক্ষ্য বটেই, একই বিদ্যার সকল বিভাগে অভিজ্ঞ ব্যক্তিও দুর্লভ। আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সহিত সর্বাঙ্গীণ পরিচয় লাভের এই সকল বাধা অতিক্রমণে কোষগ্রন্থের সাহায্য স্বভাবতঃই অপরিহার্য হইয়া উঠিয়াছে। কেননা কোষগ্রন্থের কাজই হইল বিশ্ববিদ্যার সারাংশ সংকলন করিয়া উহা সুবিন্যস্তভাবে পরিবেশন করা। সংস্কারমুক্ত, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ ভাবে কোষগ্রন্থ-সংকলকগণ সকল জাতির জ্ঞানসাধনার সংহিতা রচনা করিতে অবতীর্ণ হওয়ায় একটি উপরি-লাভ হইয়াছে। বিদ্যা যে সংকীর্ণ রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা ভৌগোলিক সীমানার উর্ধের্ব, মানবজ্ঞান যে অবিভাজ্য— এই সত্য আরও দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইহার ফলে আন্তর্জাতিকতার বোধ আরও পরিব্যাপ্ত হইবারই সম্ভাবনা।

 উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিশ্বকোষ জাতীয় গ্রন্থ ছিল বিশেষভাবে বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতদের জন্যই লিখিত প্রবন্ধসঞ্চয়ন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’র নবম সংস্করণ (১৮৭৫-৮৯ খ্রী) মুদ্রিত হইবার পর ঐ আদর্শ সাধারণতঃ পরিত্যক্ত হইয়াছে। জ্ঞানরাজ্য সর্বসাধারণের নিকট অবারিত করিয়া দিবার প্রবর্তনায় প্রবন্ধের প্রকাশভঙ্গী ও ভাষারীতিরও পরিবর্তন ঘটিয়াছে। বিষয়বস্তুকে কোনও প্রকারে তরলীকৃত না করিয়াও সরল ও যথাসম্ভব পরিভাষাবর্জিত ভাষায় উহার পরিবেশন আধুনিক কোষগ্রন্থের আদর্শ। পুরানো ধরনের বিশ্বকোষে প্রবন্ধ গুলি হইত মনোগ্রাফের অনুরূপ। অধুনা ঐ রীতিও পরিত্যক্ত হইয়াছে। পাঠকসাধারণ যাহাতে সহজে ও অবিলম্বে জ্ঞাতব্য বিষয় খুঁজিয়া পান সেই দিকে লক্ষ্য রাখিয়া এখন প্রবন্ধের বিন্যাসভঙ্গী পরিবর্তিত ও আয়তন সংক্ষিপ্ততর হইয়াছে। স্কুল-কলেজের ব্যয়সাধ্য ও সময়সাধ্য শিক্ষার সুযোগ হইতে যাহারা বঞ্চিত, তাহারাও আজ তাই কোষগ্রন্থ পাঠ করিয়া অল্পায়াসে বিশ্ববিদ্যার সহিত পরিচিত হইতে পারেন। এইরূপে, মাতৃভাষায় রচিত বিশ্বকোষ এযুগে লোকশিক্ষার বাহন হইয়া উঠিয়াছে।

 বিশ্বকোষগ্রন্থের ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে এ কথা স্পষ্ট হইয়া ওঠে যে উহার সংকলনকার্য

[৭]