নিজের দোষ কবুল করিলাম, এবার পরের প্রতি দোষারোপ করিবার অবসর পাওয়া যাইবে। অনেকে এরূপ চেষ্টাকে নিন্দা করেন, আমরাও করি। কিন্তু যে লোক বিচার করে, অন্যে তাহাকে বিচার করিবার অধিকারী। সে অধিকারটা ছাড়িতে পারিব না। তাহাতে পরের কোন উপকার হইবে বলিয়া আশা করি না—কিন্তু অপমানের দিনে যেখান হইতে যতটুকু আত্মপ্রসাদ পাওয়া যায়, তাহা ছাড়িয়া দিতে পারিব না।
আমরা দেখিয়াছি, আমাদের অত্যুক্তি অলসবুদ্ধির বাহ্যবিকাশ। তা ছাড়া মাঝে মাঝে সুদীর্ঘকাল পরাধীনতাবশত চিত্তবিকারেরও হাত দেখিতে পাই। যেমন আমাদিগকে যখন-তখন, সময়ে অসময়ে, উপলক্ষ্য থাক্ বা না থাক্, চীৎকার করিয়া বলিতে হয়—আমরা রাজভক্ত। অথচ ভক্তি করিব কাহাকে, তাহার ঠিকানা নাই। আইনের বইকে, না, কমিশনর সাহেবের চাপরাশকে, না, পুলিসের দারোগাকে? গবর্মেণ্ট আছে, কিন্তু মানুষ কই? হৃদয়ের সম্বন্ধ পাতাইব কাহার সঙ্গে? আপিস্কে বক্ষে আলিঙ্গন করিয়া ধরিতে পারি না। মাঝে মাঝে অপ্রত্যক্ষ রাজার মৃত্যু বা অভিষেক উপলক্ষ্যে যখন বিবিধ চাঁদার আকারে রাজভক্তি দোহন করিয়া লইবার আয়োজন হয়, তখন, ভীতচিত্তে, শুষ্কভক্তি ঢাকিবার জন্য অতিদান ও অত্যুক্তির দ্বারা রাজপাত্র কানায় কানায় পূর্ণ করিয়া দিতে হয়। যাহা স্বাভাবিক নহে, তাহাকে প্রমাণ করিতে হইলে লোকে অধিক চীৎকার করিতে থাকে—এ কথা ভুলিয়া যায় যে, মৃদুস্বরে যে বেসুরা ধরা পড়ে না, চীৎকারে তাহা চারগুণ হইয়া উঠে।
কিন্তু এই শ্রেণীর অত্যুক্তির জন্য আমরা একা দায়ী নই। ইহাতে পরাধীন জাতির ভীরুতা ও হীনতা প্রকাশ পায় বটে, কিন্তু এই অবস্থাটায় আমাদের কর্ত্তৃপুরুষদের মহত্ব ও সত্যানুরাগের প্রমাণ দেয় না