বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২
ভারতবর্ষ।

লক্ষ্মীগণ যতই সেবার কর্ম্মে ব্রতী হন, তুচ্ছ কর্ম্মসকলকে পুণ্যকর্ম্ম বলিয়া সম্পন্ন করেন, অসামান্যতাহীন স্বামীকে দেবতা বলিয়া ভক্তি করেন,ততই তাঁহারা শ্রীসৌন্দর্যে পবিত্রতায় মণ্ডিত হইয়া উঠেন—তাঁহাদের পুণ্যজ্যোতিতে চতুর্দ্দিক হইতে ইতরতা অভিভূত হইয়া পলায়ন করে।

 য়ুরোপ এই কথা বলেন যে, সকল মানুষেরই সব হইবার অধিকার আছে–এই ধারণাতেই মানুষের গৌরব। কিন্তু বস্তুতই সকলের সব হইবার অধিকার নাই, এই অতি সত্যকথাটি সবিনয়ে গোড়াতেই মানিয়া লওয়া ভালো। বিনয়ের সহিত মানিয়া লইলে তাহার পরে আর কোনো অগৌরব নাই। রামের বাড়িতে শ্যামের কোনো অধিকার নাই, এ কথা স্থিরনিশ্চিত বলিয়াই রামের বাড়িতে কর্তৃত্ব করিতে না পারিলেও শ্যামের তাহাতে লেশমাত্র লজ্জার বিষয় থাকে না। কিন্তু শ্যামের যদি এমন পাগলামি মাথায় জোটে যে, সে মনে করে, রামের বাড়িতে একাধিপত্য করাই তাহার উচিত এবং সেই বৃথাচেষ্টায় সে বারংবার বিড়ম্বিত হইতে থাকে, তবেই তাহার প্রত্যহ অপমান ও দুঃখের সীমা থাকে না। আমাদের দেশে স্বস্থানের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সকলেই আপনার নিশ্চিত অধিকারটুকুর মর্যাদা ও শান্তি লাভ করে বলিয়াই,ছোট সুযোগ পাইলেই বড়কে খেদাইয়া যায় না, এবং বড়ও ছোটকে সর্বদা সর্বপ্রযত্নে খেদাইয়া রাখে না।

 য়ুরোপ বলে, এই সন্তোষই, এই জিগীষার অভাবই, জাতির মৃত্যুর কারণ। তাহা য়ুরোপীয় সভ্যতার মৃত্যুর কারণ বটে, কিন্তু আমাদের সভ্যতার তাহাই ভিত্তি। যে লোক জাহাজে আছে তাহার পক্ষে যে বিধান, যে লোক ঘরে আছে তাহারও পক্ষে সেই বিধান নহে। য়ুরোপ যদি বলে সভ্যতামাত্রেই সমান এবং সেই বৈচিত্র্যহীন সভ্যতার আদর্শ কেবল য়ুরোপেই আছে, তবে তাহার সেই স্পর্ধাবাক্য শুনিয়াই