বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩২
ভারতবর্ষ।

অনেক সময়ে সৈন্যের কাজ করে। যাহাকে চালনা করিতে হইবে, তাহার কাছে প্রেষ্টীজ্‌ রাখা চাই। বোয়ারযুদ্ধের আরম্ভকালে ইংরাজসাম্রাজ্য যখন স্বল্পপরিমিত কৃষকসম্প্রদায়ের হাতে বারবার অপমানিত হইতেছিল, তখন ইংরাজ ভারতবর্ষের মধ্যে যত সঙ্কোচ অনুভব করিতেছিল, এমন আর কোথাও নহে। তখন আমরা সকলেই বুঝিতে পারিতেছিলাম, ইংরাজের বুট্‌ এ দেশে পূর্ব্বের ন্যায় তেমন অত্যন্ত জোরে মচ্‌মচ্‌ করিতেছে না।

 আমাদের দেশে এককালে ব্রাহ্মণের তেমনি একটা প্রেষ্টীজ্‌ ছিল। কারণ, সমাজচালনার ভার ব্রাহ্মণের উপরেই ছিল। ব্রাহ্মণ যথারীতি এই সমাজকে রক্ষা করিতেছেন কি না এবং সমাজরক্ষা করিতে হইলে যে সকল নিঃস্বার্থ মহদ্‌গুণ থাকা উচিত, সে সমস্ত তাঁহাদের আছে কি না, সে কথা কাহারো মনেও উদয় হয় নাই—যতদিন সমাজে তাঁহাদের প্রেষ্টীজ্‌ ছিল। ইংরাজের পক্ষে তাঁহার প্রেষ্টীজ্‌ যেরূপ মূল্যবান্, ব্রাহ্মণের পক্ষেও তাঁহার নিজের প্রেষ্টীজ্ সেইরূপ।

 আমাদের দেশে সমাজ যে ভাবে গঠিত, তাহাতে সমাজের পক্ষেও ইহার আবশ্যক আছে। আবশ্যক আছে বলিয়াই সমাজ এত সম্মান ব্রাহ্মণকে দিয়াছিল।

 আমাদের দেশের সমাজতন্ত্র একটি সুবৃহৎ ব্যাপার। ইহাই সমস্ত দেশকে নিয়মিত করিয়া ধারণ করিয়া রাখিয়াছে। ইহাই বিশাল লোকসম্প্রদায়কে অপরাধ হইতে, স্খলন হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করিয়া আসিয়াছে। যদি এরূপ না হইত, তবে ইংরাজ তাঁহার পুলিশ ও ফৌজের দ্বারা এত-বড় দেশে এমন আশ্চর্য শান্তিস্থাপন করিতে পারিতেন না। নবাব-বাদশাহের আমলেও নানা রাজকীয় অশান্তি সত্ত্বেও সামাজিক শান্তি চলিয়া আসিতেছিল,—তখনো লোকব্যবহার শিথিল হয় নাই, আদান প্রদানে সততা রক্ষিত হইত, মিথ্যা সাক্ষ্য