বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা । হয় ততই তার সঙ্গীত জাগ্রত এবং নৃত্য উচ্ছসিত হয়ে ওঠে। একটা বরফের পিণ্ড এবং ঝরনার মধ্যে তফাৎ কোন খানে ? না, বরফের পিণ্ডের নিজের মধ্যে গতিতত্ত্ব নেই। তাকে বেঁধে টেনে নিয়ে গেলে তবেই সে চলে । সুতরাং চলাটাই তার বন্ধনের পরিচয় । এই জন্তে বাইরে থেকে তাকে ঠেলা দিয়ে চালনা করে নিয়ে গেলে প্রত্যেক আঘাতেই সে ভেঙে যায় তার ক্ষয় হতে থাকে – এই জন্ত চলা ও আঘাত থেকে নিস্কৃতি পেয়ে স্থির নিশ্চল হয়ে থাকাই তার পক্ষে স্বাভাবিক অবস্থা । কিন্তু ঝরনার সে গতি সে তাব নিজেরই গতি, সেই জন্তে এই গতিতেই তার ব্যাপ্তি, মুক্তি, তার সৌন্দর্য্য। এই জন্ত গতিপথে সে যত আঘাত পায় করে । বাধায় তার ক্ষতি নেই, চলায় তার শ্রান্তি নেই। মানুষের মধ্যে ও ঘথন রসের অবিভব না থাকে, তখনি সে জড়পিগু। তখন ক্ষুধা তৃষ্ণ ভয় ভাবনাই তাকে ঠেলে ঠেলে কাজ করায়, সে কাজে পদে পদেই তার ক্লাস্তি । সেই নীরস অবস্থাতেই মানুষ অস্তরের মিশচল ৩ থেকে বাহিরেও কেবলি নিশ্চলত বিস্তার করতে থাকে। তখনই তার যত খুঁটিনাটি, যত আচার বিচার, যত শাস্ত্র শাসন। তখনই মামুষের মন গতিহীন বলেই বাহিরে ও সে আষ্টেপৃষ্ঠে বদ্ধ। তখনি তাৰ ওঠা বস। খাওয়া পর সকল দিকেই বঁধাবধি । তখনি সে সেই সকল নিরর্থক কৰ্ম্মকে স্বীকার করে যা তাকে সম্মুখের দিকে অগ্রসর করে না, যা তাকে তাকে বৈচিত্র্য দান ーで落 রসের ধৰ্ম্ম । 8○ অন্তহীন পুনরাবৃত্তির মধ্যে কেবলি একই জায়গায় ঘুরিয়ে মারে। রসের আবির্ভাবে মানুষের জড়ত্ব ঘুচে যায়। মৃতরাং তখন সচলত তার পক্ষে অস্বাভাবিক নয়, তখন অগ্রগামী গতি শক্তির আনন্দেই সে কৰ্ম্ম করে, সৰ্ব্বজয়ী প্রাণশক্তির আনন্দেই সে দুঃখকে স্বীকার করে । বস্তুত মামুষের প্রধান সমস্ত এ নয় যে, কোন শক্তি দ্বারা সে দুঃথকে একেবারে নিবৃত্ত করতে পারে । তার সমস্তই হচ্চে এই যে, কোন শক্তি দ্বারা সে দুঃপকে সহজেই স্বীকার করে নিতে পারে । দুঃথকে নিবৃত্ত করবার পথ যার দেখাতে চান তারা অহংকেই সমস্ত অনর্থের হেতু বলে একেবারে তাকে বিলুপ্ত করতে বলেন ; দুঃখকে স্বীকার করবার শক্তি র্যার দিতে চান তারা অংহকে প্রেমের দ্বারা পরিপূর্ণ করে তাকে সার্থক করে তুলতে বলেন। অর্থাৎ গাড়িথেকে ঘোড়াকে খুলে ফেলাই যে গাড়িকে খানায় পড়া থেকে রক্ষা করবার সুকৌশল তা নয়, ঘোড়ার উপরে সাবথিকে স্থাপন করাই হচ্চে গাড়িকে বিপদ থেকে বাচানো এবং তাকে গম্যস্থানের অভিমুখে চালানোর যথোচিত উপায়। এই জন্তে মানুষের ধৰ্ম্মসাধনার মধ্যে যখন ভক্তির আবির্ভাব হয় তখনি সংসারে যেখানে যা কিছু সমস্ত বজায় থেকেও মামুষের সকল সমস্তার মীমাংসা হয়ে যায়—তখন কৰ্ম্মের মধ্যে সে আনন্দ ও দুঃখের মধ্যে সে গৌরব অনুভব করে ; তখন কৰ্ম্মই তাকে মুক্তি দেয় এবং দুঃখ তার ক্ষতির কারণ হয় না। ঐরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।