পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রথম পরিচ্ছেদ

বলিয়া আসিয়াছে আমি একদিনে সে অভ্যাস কেমন করিয়া ছাড়িব?” “ভাল। চক্ষু মুদিয়াছিলে কেন?” “ভয়ে।” “সে কি ভুবন, তোমার ভয়?” “মহারাজ, মানুষকে অথবা জানোয়ারকে ডরাই না। কিন্তু ঐ গেরুয়াপরা ঠাকুরদের দেখিলে আমার বুক কাঁপিয়া উঠে।” “সত্য বলিয়াছ, সন্ন্যাসীরা বড়ই ক্রোধনস্বভাব।”

 ভুবন কথা কহিল না দেখিয়া যুবক তাহার দিকে চাহিলেন, দেখিলেন সে দূরে নদীবক্ষে একখানি নৌকার দিকে চাহিয়া আছে। যুবক তখন পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভুবন, কি দেখিতেছ?” ভুবন মুখ না ফিরাইয়াই কহিল, “মহারাজ, নৌকা খানা বড় জোরে চলিতেছে।” “বোধ হয়, ফৌজদারের ছিপ্‌।” “না, ছিপ্‌ নয়, হুজুর, একখানা কোশা।” “কোশা কি কখনও জোরে চলিতে পারে?” “ফিরিঙ্গীর কোশা চলে।” “এখানে ফিরিঙ্গীর কোশা কোথা হইতে আসিবে? সপ্তগ্রাম বহুদূর।” “আমিও তাহাই ভাবিতেছি।” “আমাদের মক্‌সুসাবাদে বাদশাহী নাওয়ারার কোশাত নাই। হয়ত ঢাকা হইতে আসিয়াছে।” “হুজুর, প্রকাণ্ড কোশা, একদিকে পঞ্চাশখানা বৈঠা পড়িতেছে—”

 সহসা ভুবন কাঁপিয়া উঠিল, যুবক ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি?” ভুবন উত্তর না দিয়া নৌকা হইতে তাহার ধনু উঠাইয়া লইল, তাহা দেখিয়া যুবকও ধনু উঠাইলেন। দেখিতে দেখিতে একখানা দীর্ঘ নৌকা তীরবেগে গঙ্গার মধ্যস্থলে আসিয়া