পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
৩১

 এই বলিয়া ফতিমা সেতার আনিবার জন্য উঠিয়া গেল। বজরার ছাদে একজন বৃদ্ধ মুসলমান বসিয়াছিল; যুবতী তাহাকে ইসারা করিল, সে নামিয়া আসিয়া সেলাম করিয়া দাঁড়াইল। যুবতী কহিল, “হবিব, ঐ তিন্তিড়ি-বৃক্ষ-তলে যে কাফের যুবা বসিয়া আছে, গোপনে উহার পরিচয় জানিয়া আইস। খবরদার আমাদের পরিচয় দিও না।” বৃদ্ধ সেলাম করিয়া বজরা হইতে নামিয়া গেল। এই সময়ে ফতিমা সেতার লইয়া ফিরিয়া আসিল, যুবতী সেতার লইয়া সুর বাঁধিতে বসিল। সুর বাঁধা শেষ হইলে, যুবতী নয়নকোণে চাহিয়া দেখিল যে, হবিব্‌ তিন্তিড়ি-বৃক্ষতলে যুবকের পার্শ্বে গিয়া বসিয়াছে। যুবতীর তাম্বূলরঞ্জিত কুসুমপেলব অধরে ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিয়া আবার মিলাইয়া গেল। যুবতী সেতার উঠাইয়া লইয়া বাজাইতে আরম্ভ করিল। তখনও দিবসের প্রথম প্রহর অতীত হয় নাই। যুবতী ভুলক্রমে পূরবী আলাপ করিতে আরম্ভ করিল, ভুল বুঝিতে পারিয়া তাহা ছাড়িয়া দিল। গজদন্তনির্ম্মিত ক্ষুদ্র সেতারে সিন্ধুর একটা মিঠা গৎ বাজিতেছিল। সেকালে সপ্তগ্রামে সমজদারের অভাব ছিল না, দেখিতে দেখিতে নদীতীরে লোক জমিয়া গেল, যুবতী সেতারের অন্তরাল হইতে চাহিয়া দেখিল, কাফের যুবা একদৃষ্টে তাহার দিকে চাহিয়া আছে। গোলাপের ন্যায় সুন্দর অধরে আবার হাসির রেখা ফুটিয়া উঠিল, যুবতী সেতার রাখিয়া কামরায় প্রবেশ করিল। তীরে ও নদীর জলে নৌকায় নৌকায় লোকে