পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫০
ময়ূখ

“সেখানে তোমার কে আছে?” “কেহই নাই। সেই বৃদ্ধ ভৃত্য যদি না মরিয়া গিয়া থাকে, তাহা হইলে সেই আছে।” “চল তাহাকে দেখিয়া আসি।”

 বৃদ্ধ রমণীগণকে লইয়া যুবতীর গৃহে প্রবেশ করিলেন। হবিব্‌, মূর্চ্ছিত হইয়াছিল, ফতেমা ও যুবতীর শুশ্রূষায় তাহার চেতনা ফিরিয়া আসিল। তখন বৃদ্ধ কহিলেন, “মা, অদ্য রজনীতে নগর নিরাপদ নহে, চল সপ্তগ্রাম ছাড়িয়া অন্যত্র আশ্রয় লই।” যুবতী কহিল, “ত্রিবেণীর ঘাটে আমার বজরা আছে।” বৃদ্ধ কহিলেন, “চল ত্রিবেণীতেই যাই।” গৃহ পরিত্যাগ করিয়া সকলে পুর্ব্বদিকে যাত্রা করিলেন।

 কিয়দ্দুর গিয়া বৃদ্ধ এক প্রশস্ত রাজপথে উপস্থিত হইলেন। পথের চারিদিকে স্তূপীকৃত মৃতদেহ পড়িয়াছিল, কামানের গোলায় চারিদিকে আগুন লাগিয়া গিয়াছিল, বৃদ্ধ সেই স্থানে দাঁড়াইয়া পথ নিরূপণের চেষ্টা করিতেছিলেন। যুবতী সহসা আর্ত্তনাদ করিয়া এক হিন্দু সৈনিকের দেহের উপরে পতিত হইল। বৃদ্ধ বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা, এ তোমার কে?” যুবতী রুদ্ধকণ্ঠে কহিল, “আমার খসম্।” ফতেমা বিস্মিতা হইয়া যুবতীর মুখের দিকে চাহিল, তাহা দেখিয়া যুবতী পুনরায় কহিল, “আমার খসম্ রাগ করিয়া আমায় পরিত্যাগ করিয়াছিলেন।” বৃদ্ধ পুনর্ব্বার জিজ্ঞাসা করিল, “মা, তুমি যে বলিয়াছিলে, তোমাকে রক্ষা করিবার কেহই নাই?” যুবতী ময়ূখের উপরে মুখ দিয়া অম্লান বদনে