বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।

রাখা হইত কায়েদীর টিকিট। টিকিটে কয়েদীর নম্বর, দণ্ডের বর্ণনা, নাম ধাম ইত্যাদি লেখা থাকিত। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দিনে কুঠুরীতে থাকিবার অনুমতি ছিল না। যাহাদের কাজে যাইতে হইত তাহাদের ত’ কুঠুরীতে থাকা চলিতই না, এমন কি, বিনা শ্রমে দণ্ডিত নিষ্কর্ম্মা কয়েদীদের ও থাকিতে দেওয়া হইত না। তাহাদের বারাণ্ডায় থাকিতে হইত। আমার সুবিধার জন্য গবর্ণর একটী টেবিল ও দুইটী বেঞ্চ রাখিবার “অনুমতি দিয়াছিলেন; তাহাতে আমার অনেক কষ্টের লাঘব হইয়াছিল।

 নিয়ম ছিল যে দুই মাসের দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদীদের কেশ ও শ্মশ্রু মুণ্ডন করিতে হইবে। ভারতবাসীগণের প্রতি এই নিয়ম বিশেষ কঠোরতার সহিত চালান হইত না। যে আপত্তি করিত তাহার শ্মশ্রু রাখিয়া দেওয়া হইত। এ বিষয়ে একটী মজার কথা শুনুন। আমি নিজে জানিতাম যে কয়েদীদের চুল কাটা হইত; আরও শুনিয়াছিলাম যে কয়েদীদের আরামের জন্যই এরূপ হইত। আমি ত’ এ নিয়ম পালনে অভ্যস্ত ছিলাম। আমার কাছে এ নিয়ম উপযোগী বলিয়াই মনে হয়। জেলে চিরুণী ইত্যাদি চুল পরিস্কার রাখিবার উপকরণ ত পাওয়া যাইত না, আর চুল পরিষ্কার না রাখিতে পারিলে ফুসকুড়ি ইত্যাদি হইবার সম্ভাবনা ছিল। আবার গ্রীষ্মের দিনে চুলের বোঝা বহ। অসহ্য হইয়া পড়িত। কয়েদীদের আয়না জুটিত না। শ্মশ্রু ময়লা ও দুর্গন্ধ হইবার ও সম্ভাবনা ছিল। খাইবার সমস্ত রুমালও পাওয়া যাইত না। কাঠের চামচ দিয়া খাইতে বিরক্ত বোধ হইত। শ্মশ্রু বড় হইলে তাহার মধ্যে উচ্ছিষ্ট আট্‌কাইয়া থাকিত। আমার মনে হইত, জেলের সকল অভিজ্ঞতাই লাভ করা উচিত। তাই প্রধান দারোগাকে বলিলাম আমার চুল ও শ্মশ্রু কাটাইয়া দেওয়া হোক্‌, তিনি উত্তর দিলেন এ বিষয়ে গবর্ণরের কড়া নিবেধ আছে। আমি বলিলাম— আমি জানি যে গবর্ণর আমাকে এ বিষয়ে বাধ্য করিতে পারেন না।