পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
১৫

খাদ্য যাহা এখন মিলিতেছে তাহাই পাইবেন। অন্য কিছু খাদ্য দেওয়ার অধিকার আমার নাই।

 ইতি মধ্যে পূর্ব কথিত আরও ১৪ জন ভারতীয় কয়েদি আসিয়া পড়িলেন। তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই ‘পূপূ’(লপ‍্সি) খাইতে অস্বীকার করিয়া আহার গ্রহণ না করিয়া দিন কাটাইতে লাগিলেন। তখন আমি জেলের নিয়ম পড়িলাম এবং জানিতে পারিলাম যে এ বিয়য়ে আবেদন Director of Prisons এর (কারা বিভাগের সর্বময় কর্তা) নিকট করিতে হইবে। তখন গভর্ণরের অনুমতি লইয়া নিম্নলিখিত আবেদন পাঠান হইল। “আমরা নিম্নে স্বাক্ষরকারী কয়েদিগণ আবেদন করিতেছি যে, আমরা ২১ জন এসিয়াটীক বর্তমানে কারাদণ্ড ভোগ করিতেছি তাহার মধ্যে ১৮ জন ভারতবাসী আর বাদ বাকী চীন দেশবাসী। ১৮ জন ভারতবাসীর খাদ্যে সকালে ‘পূপূ’ দেওয়া হয়। আর সকলের জন্য চাল ও ঘি, তিনবার বীন্, আর ৪ বার ‘পূপূ’ দেওয়া হয়। শনিবার আলু ও রবিবার সব‍্জি দেওয়া হয়। ধর্ম্ম অনুযায়ী আমরা কেহই মাংস ভক্ষণ করিতে পারি না। অনেকের ত মাংস ভক্ষণ ধর্ম্ম নিষিদ্ধই, অনেকের আবার শুদ্ধ মাংস ছাড়া অন্য মাংস খাওয়া ধর্ম্ম বিরুদ্ধ। চীনীদের চাউলের পরিবর্তে ভুট্টা দেওয়া হয়। আবেদনকারিদের মধ্যে অধিকাংশই ইউরোপীয় রীতি অনুযায়ী ভোজনে অভ্যস্ত, এবং তাঁহারা রুটি ও আটার তৈয়ারি অন্যান্য দ্রব্য গ্রহণ করেন।

 আমাদের মধ্যে অনেকের ‘পূপূ’ মোটেই সহ্য হইত না। ইহাতে অজীর্ণ হইত। আমাদের মধ্যে সাত জন ত সকালে কিছুই খাইত না। কেবল কোন কোন সময়ে চীনী কয়েদীরা দয়া করিয়া আপনাদের রুটী হইতে কয়েক টুক‍রা দিলে তাই খাইত। আমি গভর্ণরকে এ কথা জানাইয়াছিলাম। তিনি বলিলেন চীনী কয়েদিদের নিকট হইতে রুটী লওয়া অপরাধ বলিয়াই গণ্য হয়। আমাদের মনে হয় পূর্বোক্ত খাদ্য আমাদের পক্ষে ক্ষতিকর।