পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
কারাকাহিনী।

পাওয়া যার ত ভাল, এই ভাব। তাহা ছাড়া তাঁহারা যে ঝোল ও মাংস পাইতেন তাহাও খুব বেশী পরিমাণে, তাঁহাদিগকে চা বা কোকো অনেক বার দেওয়া হইত। ইহাতে বোঝা যায় যে কাফ্রিদের কাফ্রিদের মত ও য়ুরোপীয়দের যুবোপীয়দের মতই আহার দেওয়া হইত। বেচারী ভারতীয়গণ মাঝখানে পড়িয়া ত্রিশঙ্কুর অবস্থায় ছিলেন। তাঁহাদের নিজেদের অভ্যাস অনুযায়ী খাবার পাইবার সৌভাগ্য কোন দিনই হইল না। তাঁহাদের য়ুরোপীয় খাদ্য দেওয়া হইলে শ্বেতাঙ্গেরা লজ্জা পাইতেন। ভারতীয়দিগকে অন্য কিরূপ খাদ্য দেওয়া যাইতে পারে তাঁহারা তখন তাহাই ভাবিতে লাগিলেন। তাই শেষ কাফ্রিদের মধ্যেই তাঁহাদিগকে ঢুকাইয়া দেওয়া হইল।

 এই অবিচার আজ পর্যন্ত চলিয়া আসিতেছে। চক্ষু মেলিয়া কেহ এখনও তাহার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছে না। সত্যাগ্রহের পক্ষে ইহা দুর্ব্বলতা, ইহাই আমার মনে হয়। কারণ একদিকে যেমন কয়েকজন ভারতবাসী কয়েদী চুরি করিয়া লুকাইয়া, যেমন করিয়া হউক, ভিক্ষা করিয়া আহার্য্য সংগ্রহ করিতেন এবং তাহাতে তাঁহাদিগকে কোন বিপদেও পড়িতে হইত না, তেমনিঅন্য দিকে কয়েকজন ভারতীয় কয়েদী যাহা দেওয়া হইত তাহাই খাইতেন এবং আপন বিপদের কথা বলিতে লজ্জা বোধ করিতেন। যাঁহারা বাহিরে বাহিরে ছিলেন তাঁহারা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। যদি আমরা সত্যভাবে কর্ম্ম গ্রহণ করি এবং অন্যায়কে আঘাত করি তবে এরূপ কষ্ট সহিতেই হয় না। স্বার্থ ছাড়িয়া পরমার্থের দিকে দৃষ্টি রাখিলে দুঃখের ঔষধ সহজেই পাওয়া যায়।

 কিন্তু এই প্রকার দুঃখের প্রতীকার যেমন প্রয়োজন তেমনি অন্য একটি কথা চিন্তা করাও অত্যন্ত আবশ্যক। কয়েদী হইলে নানা প্রকার কষ্ট সহ করিতে হয়। যদি কষ্টই না হইবে, তবে জেল কিসের জন্য? যে