পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
কারাকাহিনী।

 আমি এই জেলে থাকিবার সময় সত্যাগ্রহী কয়েদীর সংখ্যা খুব বাড়িয়া গেল। একবার ত’ পঞ্চাশের উপর উঠিল। অনেককেই পাথরে বসিয়া ছোট একটি হাতুড়ি দিয়া পাথর ভাঙ্গিবার কাজ দেওয়া হইয়াছিল। ৮।১০ জনকে ছেঁড়া কাপড় সেলাই করিবার কাজ দেওয়া হইল। আমাকে কলে টুপি সেলাই করিতে দেওয়া হইয়াছিল। কলের কাজ এইখানেই আমি প্রথম শিখিলাম। কাজটা সহজই ছিল, শিখিতে দেরী হইল না। অধিকাংশ ভারতবাসীকেই পাথর ভাঙ্গার কাজে লাগান হইয়াছিল, সুতরাং আমিও এই কাজ করিতে চাহিলাম। কিন্তু দারোগা বলিল, “আমাকে বড় দারোগা নিযেধ করিয়া দিয়াছে যেন তোমাকে বাহিরে লইয়া না যাই।” সে আমাকে পাথর ভাঙ্গিতে যাইতে দিল না। একদিন আমার মেশিনে বা হাতে সেলাই করার কোনও কাজই ছিল না, তখন আমি পড়িতে লাগিলাম। নিয়ম আছে যে প্রত্যেক কয়েদীকেই জেলে কোন না কোন কাজ করিতে হইবে। দারোগা আমাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল—“কি, তোমার আজ অসুখ করিয়াছে?” উত্তর দিলাম, “না, মহাশয়”; “তবে কাজ করিতেছ না কেন?” উত্তর দিলাম, “আমার যা’ কাজ ছিল তা শেষ হইয়া গেছে—আমি কাজের ছুতা করিতে চাহি না;—কাজ দাও, করিতে প্রস্তুত আছি, যখন কোনও কাজ নাই, তখন পড়িলে ক্ষতি কি?”

 সে বলিল—“তা ঠিক; তবে যখন বড় দারোগা বা গবর্ণর আসিবেন তখন তুমি ষ্টোরে থাকিলে ভাল হয়।”

 না, আমি তাহাতে রাজী নই। আমি ত’ গবর্ণরকেও বলিয়াছি ষ্টোরেও পুরা কাজ আমার থাকে না—আমাকে কাঁকড় ভাঙ্গিতে পাঠাইয়া দেওয়া হোক না।” “সে খুব ভালই হয়, কিন্তু আমি ত’ আর বিনা হুকুমে তোমাকে কাঁকড় ভাঙ্গিতে পাঠাইতে পারি না।”