পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রাজা। ইচ্ছামত কখনই নহে, কিন্তু যুদ্ধে যদি অবশেষে আওরংজীবের জয় হয়, তাহা হইলে তাহাকে সম্রাট বলিয়া মানিতে হইরে। আমরা দিল্লীর সম্রাটের অধীন, যিনি যখন সম্রাট হইবেন, তখন তাহার বিরুদ্ধাচারণ রাজদ্রোহিতা।

 দেবের। ভাল অদ্য আপনি ইচ্ছা করিলে অনায়াসে সুজাকে বন্দী করিতে পারিতেন। সুজা যখন পলায়ন করিলেন, আপনি অনায়াসে পশ্চাদ্ধাবন করিয়া ধরিতে পারিতেন, তাহা হইলে যুবরাজ দারাও অতিশয় সন্তুষ্ট হইতেন। আপনি সেরূপ করিলেন না কেন?

 রাজা। অদ্য সুজাকে পলাইতে দিয়াছি, তাহার কারণ আছে। ভ্রাতায়-ভ্রাতায় যেরূপ বিজাতীয় ক্রোধ, যদি সুজাকে দারা সম্মুখে লইয়া যাইতাম, বোধ হয়, যুবরাজ তাহার প্রাণদণ্ড করিতেন অথবা তাহাকে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ রাখিতেন। তাহা কি বিধেয়? বিশেষ, আমি এই যুদ্ধে আসিবার সময় সম্রাট্, শাজাহান, যুদ্ধ না হয়, এরূপ চেষ্টা করিতে বলিয়া দিয়াছিলেন। সুজার হানি করা তাহার ইচ্ছা নহে। সম্রাটের এই কথা অনুসাবে আমি সন্ধিস্থাপনের কথা বলিয়া পাঠাইয়াছিলাম, সুজাও একপ্রকার সম্মত হইয়াছিলেন। কিন্তু সুলাইমান যুবা পুরুষ আপন বিক্রম দেখাইবার জন্য অধীর হইয়া সহসা গঙ্গাপার হইয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন।

 এইরূপ কথোপকথন হইতেছে, এরূপ সময় একজন প্রহরী আসিয়া বলিল, “মহারাজ, সেনানী গজপতিসিংহ একবার সাক্ষাৎ করিতে চাহেন।” রাজা আসিতে আজ্ঞা দিলেন। ক্ষণেক পর গজপতিসিংহ আসিয়া বলিলেন,—“মহারাজ। বঙ্গদেশের একজন হিন্দু বন্দী হইয়াছে, সে আহত। তাহার নিকট হইতে বঙ্গদেশীয় অনেক সংবাদ পাওয়া যাইতে পারে।”

 রাজা কিঞ্চিৎ চিন্তা করিয়া বলিলেন, “আপাতঃ আমার শিবিরে থাকিতে দাও।”

 নরেন্দ্রনাথকে অচেন্ন অবস্থায় শিবিরে লইয়া যাওয়া হইল।

 পরে জয়সিংহ গজপতিকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন,—“গজপতি, অন্য তুমি যুদ্ধে আমার বিশেষ সহায়তা করিয়াছ, সেজন্য তোমাকে ও তোমার প্রভু যশোবন্ত সিংহকে আমি ধন্যবাদ দিতেছি। এক্ষণে কি কথা বলির জন্য যশোবন্ত তোমাকে আমার নিকট পাঠাইয়াছেন, নিবেদন কর।”

 উভয়ে গুপ্ত কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইলেন।

॥ এগার॥

 তাহার পর কয়েকদিন নরেন্দ্রনাথ অরে অচেতন অবস্থায় থাকিলেন। মধ্যে মধ্যে সহজ হইত, বোধ হইত যেন, তরীতে অতি দ্রুতবেগে গলার উপর দিয়া যাইতেছেন।

২৮