ফাঁক রাখছ?
মিস্ত্রিরা মুখ টিপিয়া হাসে। শ্যামা বলে — জানালা হবে না ত কি দেয়ালে ফাঁক থাকবে?
— তাই বলছি — শীতল বলে,— জানালা হবে কটা? তিনটে মোটে না না, তিনটে জানালায় আলো বাতাস খেলবে না ভাল,— ওহে মিস্ত্রি এইখানে আরেকটা জানলা ফুটিয়ে দাও — এদিকে একটাও জানাল কর নি দেখছি।
শ্যামা বলে — ওদিকে জানলা হবে না, ওদিকে নকুড়বাবুর বাড়ি দেখছ না? আর বছর ওরাও দোতলায় ঘর তুলবে, আমাদের ঘেঁষে ওদের দেয়াল উঠবে — জানলা দিয়ে তখন করবে কি? জান না, বোঝ না, ফোঁপরদালালি কোরো না বাবু তুমি।
শীতল অপমান বোধ করে, কিন্তু যেন অপমান বোধ করে নাই এমনি ভাবে বলে — তা কে জানে ওরা আবার ঘর তুলবে!— হাঁ হাঁ, ওখানে আস্ত ইঁট দিও না মিন্ত্রি — দেখছ না বসছে না, কতখানি ফাঁক রয়ে গেল ভেতরে? দুখানা আদ্ধেক ইঁট দাও, দিয়ে মাঝখানে একটা সিকি ইঁট দাও।
মিস্ত্রিরা কথা বলে না, মাঝখানের ফাঁকটাতে কয়েকটা ইঁটের কুচি দিয়া মসলা ঢালিয়া দেয়, শীতল আড়চোখে চাহিয়া দেখে শ্যামা ক্রূর চোখে চাহিয়া আছে। শীতল এদিকে ওদিকে তাকায়, হঠাৎ শ্যামার দিকে চাহিয়া একটু হাসে, পরক্ষণে গম্ভীর হইয়া নিচে নামিয়া আসে। দাঁড়াইয়া বিধানের একটু পড়া দেখে,— পড়িবার জন্য ছেলেকে শ্যামা গত বৈশাখ মাসে নূতন টেবিল চেয়ার কিনিয়া দিয়াছে,— পড়া দেখিতে দেখিতে শীতল টের পায় শ্যামা ঘরে আসিয়াছে। তখন সে বিধানের বইয়ের পাতায় একস্থানে আঙুল দিয়া বলে — এখানটা ভাল করে বুঝে পড়িস খোকা, পরীক্ষায় মাঝে মাঝে দেয়।
তারপর বিধান জিজ্ঞাসা করে — Circumlocutory মানে কি বাবা?
শীতল বলে, দেখ না দেখ মানের বই দেখ।
বিধান তখন খিল খিল করিয়া হাসে। শ্যামা বলে — পড়ার সময় কেন ওকে বিরক্ত করছ বল তো?
শীতল বলে, হাসলি যে খোকা?— শীতলের মুখ মেঘের মতো অন্ধকার হইয়া আসে — বাপের সঙ্গে ইয়ার্কি হচ্ছে? হারামজাদা ছেলে কোথাকার!— বলিয়া