বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি Sidd এত তীব্র অনুভূতি তার সয় না। সে ঝরনাব ধাবের ছোটো চারা গাছ, আসিয়া পড়িয়াছে প্রকাণ্ড নদীর ধারে, যে নদীতে বারোমাসই বন্যা। কুসুমকে আজকাল অনেক সময় আপন মনে বিড়বিড় করিয়া বকিতে শোনা যায়। আপন মনে বকে বলিয়া কুসুমের যে মাথা পারাপ হইয়া গিয়াছে, তাহা নয়। জীবনে তার আবেগের অভাব নাই, এদিকে তাহাকে বড়ো একা থাকিতে হয়। সকালে তাবক পাড়ার একটি ছেলেকে পড়ায, তাবপবেই তাকে আপিসে যাইতে হয়। মাড়োযাবি সওদাগরেব আপিসে বাঙালি কেরানি, সন্ধ্যার অনেক পবে সে বাড়ি ফেলে। সাবাদিন কুসুমকে মূপ বুজিয়া থাকিতে হয়, কথা বলিবাব লোক নাই। দুপুরবেলা কোনো কাজ থাকে না কি-না, খোকা তাই সেই সময়টাই পড়িয পডিযা, ঘুমায । লেখাপডা কসম ভালো জানে না। কখনও বাডিতে মাসিকপত্ৰ আসিলে তিনদিনেব চেষ্টায় একটা গল্প শেষ করে, সুতৰাং ধৈর্যও থাকে না, বসও পায় না। আজকালকাব গল্পে যে রকম চালাকি, এক নিশ্বাসে পড়িষ্যা ফেলিতে না পারিলে বোকাই বনিয়া যাইতে হয়। বাডিতে যে একটা পোষা পাখি নাই। ইহাও কুসুমের কাছে অভাবের শামিল। তােবক পাপি কিনিয়া দিতে চাস, কুসুম মাথা নাড়ে, বলে, না আব্ব পাখি পুযাব না। তার একটা সাদা ধবধবে কাকত্যিা ছিল, মরিষা গিযাছে। পাখি পুষুক আব্ব পাখি মরুক, আব্ব সে কঁাদিয়া সাবা হোক। তাব অতি শাখা নাই । এমনিভাবে কাজেব ভিডে হিমসিম পাইফা আব্ব কাজের অভাবে ছটফট করি যা মহা দারিদ্রোর মধ্যে পবম সুখে কুসুমের দিন যাইতেছিল, হঠাৎ ইতিমধ্যে তাবক একদিন আপিস হইতে দুই পকেটে দুই শিশি মাথাব্য তেল আব্ব দেহে অস্বস্তি লহিয়া বাডি ফিরিল। ‘তরি কয়েকটা টাকা মাহিনী বাডিযাছে। কুসম বলিল, ওমা, এ কী? দু-শিশি তেল তুমি কোন হিসেবে আনলে ? দু দুটাে টাকা! না, চোদো আনা করে নিয়েছে। চোদে আনান্য এক টাকায় তফাত তো ভারী!— আচ্ছা, মাইনে বেড়েছে, না হয় এনেছ একটা জিনিস শখ কবে, একসঙ্গে দুটাে কিনতে গেলে কেন ? আবাব আনা হয় কি না-হয- ও তোমাব দু-মাসেই ফুরিযে, যাবে দেখো। দৃ-মাসে দু-শিশি তেল মাখে, কত বডোলোক!——হাসিভরা মুখখানা কত করিয়া কুসুম একটু ভাবিলি। বলিল, মাইনে বেডেছে তোমাব, তেল পেলাম আমি । তোমাব তো কিছু পাওযা উচিত? তোমায় আজ লুচি খাওবাব } তাবকের শবীব খুব খারাপ লাগিতেছিল, দুপুব বেলা আপিসে সে একবার বমি করিযাছে। বোধ হয় জর হইবে। লুচিব নাম শুনিয়াই তার আবার বমি আসিতেছিল, কিন্তু কুসুমের আগ্রহ দেখিয়া সে আপত্তি করিতে পারিল না। খাবে না ? শরীর খারাপ ? বলিতে বলিতেই ওর দীর্ঘস্থায়ী অনির্বচনীয় হাসিটি একেবাবে মুছিয়া যাইবে। তাছাড়া, জুর এখনও আসে নাই, আসিবে কি-না তাহাও অনুমান মাত্র। যখন আসিবে তখন দেখা যাইবে, এখন তো কুসুম হাসিমুখে লুচি ভাজুক। কুসুম তাড়াতাড়ি ময়দা মাখিয়া লেচি, পাকাইয়া উনুন ধাবাইয়া ফেলিল। ডাক দিয়া বলিল, ওগো বাবু মশায়! লুচি খেতে হলে বেলে দিতে হয়। তারক দাওয়ায্য তামাক টানিতেছিল। ইকাটা দেয়ালে ঠেস দিয়া রাখিতে গিযা গড়াইয়া পড়িয়া গেল। খোলা বাতাসের সংস্পর্শে ছাইয়ের আবরণ সরিয়া গিয়া টিকাগুলি জ্বলজ্বল করিতে লাগিল ।