বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি S\ চেনা আছে, পরিচয় নাই। ও পক্ষে আগ্রহেব অভাব এ পক্ষে সংকোচেব বাধা । কল্পনাতীত উপভোগ্য জীবনটা উহারা কীভাবে ভোগ করে জানিবার সকরুণ কৌতুহল নিয়া ভাঙা ঘরে শঙ্কব দিন কাটায়। ফঁাকে অদৃক্টোব নিন্দাবাদ, নটা-এগারোব গাড়িতে আপিসে গিয়া ছটা-সতেরোর গাড়িতে বাড়ি ফেরা। এই তো জীবন! জীবনেব। এত অধিক বৈচিত্র্য সহ্য হইয়া গিয়াছে বলিযা আপশোশ করিয়া মরে। আজ বকুলতলা খালি দেখিয়া সে বিস্মিত হইল। সচবাচর ইহা ঘটে না। শেষবেলায় বকুলতলায় আসিয়া বসার নেশা যে কত তীব্র দূর হইতেও সে যে তাহা জানে। বাড়ি ঢুকিয়াই কারণটা বোঝা গেল। ছেলেমেয়ে তিনজন কঁদো-কঁদো মুখে একপাশে দাঁড়াইযা আছে, বিধু চোখ বুজিয়া পড়িয়া আছে চৌকির মলিন বিছানায় এবং শিয়রের কাছে টুলে বসিয়া হিমানী তব মাথায় ডবল আইসব্যাগ চাপিয়া ধরিয়া আছে। অবস্থােটা বুঝিতে একটু সময় লইয়া শঙ্কর প্রশ্ন করিল, কী হয়েছে? হিমালী বলিল, বুর। অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন, এখনও জ্ঞান হয়নি। ছেলেদের চেচামেচি শুনে এসে দেখি মেঝেতে পড়ে আছেন। ঘামে জামাটা ভিজি যা গিযাছিল। কিন্তু হিমানীর সামনে খোলা চলে না—তলায় গেঞ্জি নাই । স্বামীর খালি গাও হিমানী কোনোদিন দেখে নাই বলিযাই শঙ্কবেব বিশ্বাস। বোতামগুলি আলগা করিয়া দিযা সে বলিল, আমাক আপিস এত দূরে যে চেচিয়ে ওবা মবে গেলেও শুনতে পাই না। এই বাতুলা কথাটা বলিবাব। উদ্দেশ্য বাতুলা নয়, হিমানী চুপ করিয়া রহিল। শঙ্কর বলিল, আজ এসে দেখছি অজ্ঞান, আর একদিন এসে হয়তো দেখব মরে গেছে! শঙ্করেব আশঙ্কা হালকা করিয়া দিবাব কোনো চেষ্টা না কবিয়া হিমানী বলিল, এ সময় কোনো আত্মীযাকে এনে কাছে বাখা উচিত। শঙ্কবোব সব তৎক্ষণাৎ বদলাইয়া গেল। এখনি ? এই তো মোটে সাতমাস। এখন ভয় কীসের ? হিমানীর মুখের উপব দিযা একটা কালো মেঘ ভাসিয়া গেল, কথা কহিল ক্লিষ্ট স্বাবে, এ যে কী ভযানক সময। আপনি বুঝবেন না। যত সাবধান হওয়া যাক ভয় কমে না। সর্বদা একজন মেযেমানুষ কাছে না থাকলে যে কী সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।-- অন্ধকাবে সাপেব ঠান্ডা স্পর্শ পাওয়ার মতো শিহরিয়া সে চুপ করিল। দেখা গেল তাহার মুখ ভারী বিবৰ্ণ হইয়াছে। তিনটি সন্তানের জননীর সম্বন্ধে অপুত্রবতীর আশঙ্কার পরিমাণটা শঙ্কবেব কাছে পরমাশচর্যের মতো লাগিল। এ ভাবে হিসাব করিলে সকল অবস্থায় নরনারী-নির্বিশেষে কতরকম সর্বনাশই তো হইতে পারে, মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া আধঘণ্টার ভিতর তার পঞ্চােত্বলাভও সৃষ্টিছাড়া কিছু নয়, সে জন্য ব্যতিব্যস্ত হইয়া থাকার কোনো অর্থই যে হয় না! কিন্তু ইহার আতঙ্ক অত্যন্তই সুস্পষ্ট, ঠান্ডীয় ফ্যাকাশে আঙুলগুলি পর্যন্ত থারথার করিয়া কঁাপিতেছে। মনে হয়। বুকের ভিতর ধুকধুকানিরও সীমা নাই। শঙ্কর বলিল, আপনার শরীর আজ ভালো নেই মনে হচ্ছে। ভালো শোনাইল না। মুখ তুলিয়া স্নান হাসিয়া হিমানী বলিল, রোজ যেমন থাকি আজও তেমনি আছি।