bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা (5)brዒ মধ্যে একটি খোকা যে মনের কবিত্ব, মনের কল্পনা, মনের সৃষ্টিছাড়া অবাস্তবতা, মনের পাগলামিকে লইয়া সময়ে অসময়ে এমনি ভাবে খেলা করিতে ভালোবাসে। একদিন শশী হার ঘোয্যের বাড়ির অদূরে তালবনের ধাবে মাটির টিলাটিতে উঠিযাছিল। বর্ষাব পব টিলাটি জঙগলে ঢাকিযা যায়। জঙ্গল ভেদ করিয়া টিলার উপর উঠিবাব কী দরকার ছিল শশীর ? সূর্যস্ত দেখিবে। দিগন্তের কোলে তরুশ্রেণি যে বাঁকা বেখাটি রচনা কবিয়াছে তাঁহারই আড়াল হইতে দেখিবে সূর্যকে। কী ছেলেমানুষি শখ! নিজের কাছে ছেলেমানুষ হইতে শশীর লজ্জা ছিল না। কেবল শখটি মিটাইতে গিয়া যে মূল্য তাহাকে দিতে হইল আগে জানিলে তাঁহাতে শশী রাজি হইত না। টিলার উপরে উঠিযা পশ্চিম দিকে মুখ করিয়া সে যখন দাডাইল তখন তাহার মন শান্তিতে ভরিয়া আছে। আগামী জীবনের যত ভালো মন্দ কাজ তাহাকে কবিতে হইবে তাহা সম্পন্ন করিবাব শক্তিতে সহজ বিশ্বাস আছে, সাহস আছে। কিন্তু সূর্য ডুবিবার আগে শশী সহসা ভীত হইযা পড়িল। ছেলেবেলায় মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়া এক একদিন তাহাব যেমন ভয় কবিত, তেমনি ভয। শরীর সর্বাঙ্গ শিহরিয়া কঁপিয়া উঠিল। তাহাব মনে হইল, কয়েক মিনিটের ভবিষ্যৎও তাহাব আব্ব অবশিষ্ট নাই, সে এমনি অসহায়, এমনি ভঙ্গুর। পৃথিবীব বহু উদ্ধেৰ্ব, স্তবে স্তবে সাজানো ভযোেব তলে প্রোথিত পুথিবীব বহু উর্ধের্ব, এক৮, "°গলাকীর্ণ মাটির টিলাব শীর্ষে শশী হঠাৎ হাবাইয়া গিযাছে। সামনে কৃপ-ধবা অনন্ত। সীমাহীন ধারণাতীত কী যে তাহাব চারিদিকে ঘনীভূত হইয়া সীমাবদ্ধ হইযা আসিয়াছে শশী৷ জানে না , কিন্তু আর কখনও নিশ্বাস সে লাইতে পরিবে না। তাবপবী কযেকদিন শশী খুব চিন্তিত ও বিষন্ন হইযা বহিল। হয়। গ্রাম্য জীবনে আবাব শশীর বিতৃষ্ণা আসিয়াছে। মাঝখানে কিছুদিন সে যেন এখানে বাস করিয়াছিল অন্যমনস্কের মতো। আধখানা মন দিয়ে সব সময সে তাহাব কামা জীবনের কথা ভাবিত,-শিক্ষা, সভ্যতা ও আভিজাত্যের আবেষ্টনীতে উজ্জ্বল কোলাহলমুখর উপভোগ্য জীবন। এখানকার মশকদষ্ট মৃত্তিকালীন জীবন এই সাস্তুনাব জন্য শশীর সহ্য হইয়া আসিয়াছিল যে যখন খুশি গ্রাম ছাড়িয়া যেখানে খুশি গিয মনের মতন করিয়া জীবনটা সে আরম্ভ কবিতে পারে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর বিপুলতা অবশ্য কমিয়া যায় নাই, শশীর স্বাধীনতাও হরণ করে নাই কেহ। তবু শশীব মনে হয় চিরকালের জন্য সে গ্রামা ডাক্তারের মার্কামারা হইয়া গিয়াছে’-এই গ্রাম ছাড়িয়া কোথাও যাইবার শক্তি নাই। নিঃসন্দেহ এ জন্য দাযি কুসুম। শশীর কল্পনার উৎস সে যেন চিরতরে বুদ্ধ করিয়া দিয়াছে। বিদ্যুতেৰ আলোর মতো উজ্জ্বল যে জীবন শশী কল্পনা করিত সে যাযাবরের জীবন নয়,--শশীর নীড়-প্রেম সীমাহীন। কল্পনার তাই একটি কেন্দ্র ছিল শশীর, এক অত্যাশ্চর্য অস্তিত্বহীনা মানবী, কিন্তু অবাস্তব নয় ; শশীর ভাবুকতা উদভ্ৰান্ত হইতে জ্ঞা নে না। কুসুম যেন তাকে মিথ্যা করিয়া দিয়াছে— সেই মহা-মানবীকে। ছােটােবোন সিন্ধু আর মতি ছাড়া কারও সঙ্গ শশীর ভালো লাগে না। এত বড়ো গ্রামে শুধু এই দুটি তার প্রিয়তমা বান্ধবী। নীচে সিন্ধু পুতুল খেলা করে, খাটে বসিয়া শশী অস্বাভাবিক মনােযোগের সঙ্গে সে খেলা চাহিয়া দ্যাখে । খুকি, বড়ো হয়ে তুই কী করবি ? পুতুল খেলব।