বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 88. একটি চুম দিলেই সে তো ক্ষমা করিয়া ফেলিত ! হয়তো হারটির জন্য এতটুকু দুঃখও আর তার থাকিত না। সন্ধ্যার খানিক আগে কুমুদ হঠাৎ ঘর ছাড়িয়া বাহির হইযা আসিল, কলেব নীচে মাথাটা পাতিয়া দিয়া মতিকে বলিল, বেড়াতে যাবে তো, কাপড় পরে নাও। মতি বােয়াকে তাহার সাধের টেবিল ল্যাম্পটি সাফ করিতেছিল, কথা বলিল না। শুধু শেডটা নীচে পড়িয়া ভাঙিয়া গেল। মাথা মুছিতে মুছিতে কুমুদ আবার বলিল, কাপড় পাবে নিতে বললাম যে মতি ? মতি সজল সুবে বলিল, আমি যাব না। চলো, থিয়েটার দেখাব। না, বলিযা মতি ঘরে গিয়া শুইয়া পড়িল। কিন্তু কুমুদেব কাছে তাহার অভিমান টিকিবার নয়। সাজিয়া গুজিয়া কুমুদেব সঙ্গে মতিকে থিয়েটারে যাইতেই হইল। সেইখানে, স্টেজে যখন মাতাল যোগেশ সাজান বাগান শুকিয়ে গেল’ বলিয়া মতির বুকে কান্না ঠেলিয়া তুলিতেছে, কুমুদ তাকে খববটা জানাইল । এখানে চাকরি পেযেছি মতি । মতি মখ ফিবাইযা বলিল, কী বললে ? এই থিয়েটারে চাকরি পেয়েছি। একশো টাকা মাইনে দেবে। যোগেশেব সাজানো বাগানের শোক পলকে মাতিব কাছে মিথ্যা হইয়া গেল। সে বুদ্ধশ্বাসে বলিল, এখানে তুমি পাট কববে? কবে করবে ? এ নাটকের পরে যে নাটকটা হবে, তাতে । তারপর আর তো মাতিব মনে এতটুকু ব্যথা বা আপশোশ থাকে না। সব কুমুদেব ছিল, হােটেলের ঘরে বন্ধুদের আনা, ম্যানেজাবকে ঠকানো, জয়ার সঙ্গে মাখামাখি, হার বিক্রি কবা, সব কুমুদ তাকে পবীক্ষণ করার জন্য করিয়াছে। ও সব খেলা কুমুদেব। এতদিন মজা করিতেছিল তাকে লইযা, এবার কুমুদ তাকে ঘিরিয়া তার কল্পনার স্বৰ্গটি রচনা করি যা দিবে। আলোকোজল স্টেজের দিকে চাহিয়া যোগেশকে মতি আর দেখিতে পায় না, দ্যাখে রাজপুত্র প্রবীবের বেশে কুমুদকে। সুখে গর্বে মন ভরিযা ওঠে মতির। বাড়ি ফিরিয়া জয়াকে খববটা শোনাইতে মতির তর সন্য না। জযা শনিয়া বলে এরকম চাকবি তো নিচ্ছে আর ছাড়ছে, কমাস টিকে থাকে দাখ। এক কাজ কবিস মতি, কমুদকে লুকিযে কিছু কিছু টাকা জমাস। মনে মনে মতি তা করিতে অস্বীকার করে। লুকাইয়া টাকা জমাইবে না। কচু। কী দরকাব ? টাকাব্য জন্য কুমুদের যে কোনোদিনই আটকাইবে না, এখন হইতে মতির তাঁহাতে অক্ষুন্ন বিশ্বাস। সাঁজ খুলিতে খুলিতে উত্তেজনায মতির চোখ জ্বলজ্বল করে। সে বোধ করে একটা অভূতপূর্ব বেপরোয়া ভাব, কীসের হিসেব, ভাবনা কীসের ? কে তোয়াক্কা রাখে। কবে কীসে কী সুবিধা অসুবিধা হইতে পারে? কী প্ৰভেদ গয়না থাকা আর না থাকায় ? কুমুদের যেমন তুলনা নাই, কুমুদের মতামতগুলিও তেমনি অতুলনীয়। তেজের সঙ্গে টাকা পয়সা রীতিনীতি লইয়া ছিনিমিনি খেলার চেয়ে আর কীসে বেশি মজা ? তারপর যা হয় হইবে। কুমুদের বুকে মতি ঝাপাইয়া পড়ে। আহাদে গলিয়া গিয়া বলে, ওগো শোনো, নাচগান শেখাবে আমায়, আজ যেমন নাচছিল ? ঘরে খিল দিয়ে তোমার সামনে নাচব ? বলে, রোজ থেটার দেখিয়ো, রোজ। বিকেল বিকেল বেঁধে রেখে চলে যাব, আঁ্যা ? বলে, বেচে দেবে তো দাও না, সব গয়না বেচে দাও। ফুর্তি করি টাকাগুলো নিয়ে। মানিক ১ম-২৯