পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

A ebr মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ বেশ বোঝা গেল । নীলকর পক্ষীয লোকের এবং দারোগা, জমাদার ও স্থানীয় হাকিমান, জমিদার সকলের সম্মুখে প্রজাগণ কাতরস্বরে দুঃখের অবস্থা কান্দিয়া কান্দিয়া বলিতে লাগিল । মনের কথা প্রাণ খুলিয়া বলিতে লাগিল । হাকিমান লজ্জিত, দারোগা, জমাদারের মাথা হেঁট, নীলকবেব মুখে চুনকালি, প্রজার চক্ষে জল। আর বুঝিতে বাকি কি ? সকলেই বুঝিলেন, হাকিমান বুঝিলেন, বঙ্গাধীপও বিশেষ করিয়া বুঝিলেন যে যথার্থই নীলকবগণ অত্যাচারী। অত্যাচাব সহ করিতে না পারিয়াই এত উতলা, এত উত্তেজিত, এত একগুঁয়ে হইয়া দাডাইয়াছে। আপাততঃ মিষ্টি কথায় ইহাদিগকে সাস্তুন করা কৰ্ত্তব্য । বঙ্গাধীপেব আদেশে আমাদের পূৰ্ব্ব পরিচিত পরিষদমহোদয় উচ্চস্বরে স্পষ্টাক্ষবে বলিতে লাগিলেন— “প্রজাগণ । তোমব স্থির হও, এত উতলা হইও না। স্থির হইয! শুন ! গোল করিলে তোমাদের কার্য্যেই বিঘ্ন ঘটিবে । স্থির হইয়া কথা শুন ।” প্রজাগণ । তোমরা শ্রীশ্রীমতী মহারাণীর প্রজা । তোমাদের প্রতি সবলের কোনপ্রকার অত্যাচার না করে, চোরডাকাতে তোমাদের টাকাকড়ি লুটপাট করিয়া না লয় । জমিদার, নীলকর তোমাদিগকে অন্যায়রূপে কোনপ্রকারে কষ্ট না দেয়, জোর জবরাণ না করিতে পারে তাহার জন্যই অর্থাৎ তোমাদিগকে চিরকাল সুখে রাখিবার জন্যই স্থানে স্থানে থান, মহকুমা, জিলা বসান হইয়াছে । তোমরা সৰ্ব্বপ্রকারে মুখে থাক ইহাই আমাদের অভিপ্রায় । নীলকবের অত্যাচারে তোমরা যে কষ্টে আছ তাহা বেশ বোঝা গিয়াছে । প্রজাগণ মধ্য হইতে একজন বলিতে দশজন বলিয়া উঠিল—“দোহাই ধৰ্ম্মা বতার। আমরা একেবারে সারা হইয়াছি । আমাদের জাত, কুল, মান, প্রাণ সকলি গিয়াছে। পেটে ভাত নাই । তাহার উপর আমীন, খালাসীর বেতের ঘা, কপালগুণে কোন কোন দিন শুমচাদের সঙ্গেও আলাপ । দেখুন ! পেটের, পিঠের অবস্থা দেখুন ! আর কি বলব।” পারিষদসাহেব বলিলেন—আর দেখাইতে হইবে না। তোমাদের দুর্দশার বিষয় সকলেই ভালমত বুঝিয়াছেন। শুন—স্থির হইয়া কথা শুন । যাতে তোমাদের ভাল হইবে, তোমরা সুখে থাকিবে তাহাই শুন । তোমরা জমিদারকে দস্তুরমত জমির খাজান বিনাওক্তরে দিবে। নীলকর