পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Voo d মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ ষ্টিমার-ঘাট তাহার গ্রাস হইতে রক্ষা করেন। বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার, বড় বড় বুদ্ধিমান কৰ্ম্মচারী চিন্তা করিয়া সাব্যস্ত করিলেন যে, বুদ্ধির অসাধ্য কি আছে, একটি নদীর স্রোতই যদি বুদ্ধিকৌশলে দশহাত তফাত দিয়া ফিরাইয়া না দেওয়া যায়, তবে বিলাতী-গোঁবৰ কি ? স্টেশন, বাজার, ষ্টিমীরঘােটই যদি পদ্মার স্রোতৰেগ হইতে রক্ষণ না কবা যায়, তবে অাব রেল কোম্পানীর ক্ষমত কি ? বঙ্গলাদেশের নদীর সহিত যদি বিলাতী বিজ্ঞান পরাস্ত হয, তবে এ লজ্জা রাখিবার স্থান কোথায় ? ইয় এসপার নধ ওসপার । পদ্মার স্রোত ফিবাইয়া দিতে হইবে । দেও আড়াআডি বাধ ! ফেল ইটপাথর, দেখি পদ্মাব জ্যের কত ? দেখি পদ্মার স্রোতের তেজ, তরঙ্গের আঘাত ? বাধ আরম্ভ হইল। তাহাব নাম হইল ‘স্পার’। বিলাতী বুদ্ধির আশ্চর্য্য ক্ষমত, ‘স্পার’ প্রস্তুত হইল। একটি পাকা রাস্ত গোয়ালন্দের ঘাট হইতে পাকারূপে পদ্মার বুকের উপব চডিযা বসিল । স্রোতেব গতি ফিরিযা গেল ! শীতকলি, পদ্মা নীবৰ । যে প্রকাবে ইচ্ছ। সেইপ্রকারে বড় বড় বাহাদুরী পুড়িয়া স্পাবের মাথা ঠিক রাখা হইল। স্পারেব উপর রেললাইন পৰ্য্যস্ত বসান হইল। আশ্চৰ্য্য দৃশু ! নদীর সিকিভাগ পর্য্যস্ত পাক বাস্তার দক্ষিণ-বামে স্রোতবেগ কমিয়া গিয়া ম্পাবের মাথা ঘেষিয়া স্রোত চলিতে লাগিল । ধন্য বিলাতী বুদ্ধি! স্টেশন, ষ্টিমারঘাট, বাজার সকলি রক্ষণ হইল । কোম্পানীর আনন্দের সীমা নাই । কালস্রোতে বর্ষাশ্রোত আসিয়া উপস্থিত | পদ্মার ঐ অন্তরূপ । শ্রোতের বেগ ঘন্টায় ঘণ্টায় বৃদ্ধি-ভীষণ কলকল বব চতুগুণ বাড়িয়া গেল। স্পার আর টেকে না, প্রায় তিনলক্ষ টাকা ব্যয় করিয়! যে বধি বাধা হইয়াছে, তাহাই একেবারে জলে ভাসিয়া যায়, ডুবিয়া যায়, ভাঙ্গিয়া যায় বড়ই লজ্জার কথা। স্পার বৃক্ষ করাই কোম্পানীর মত হইল। আরও দুইলাখ টাকার ববাদ হইল। যে উপায়ে হয় স্পার রক্ষণ করিতেই হইবে। কোম্পানীর ইটপাথর যেখানে যাহা ছিল সমুদায় ট্রেনে আসিয়া স্পারে ঢালিতে লাগিল । কিছুতেই আর টেকে না। পদ্ম বিষম বিক্রম প্রকাশ করিয়া ভীষণরবে ছুটিয়াছে। কার সাধ্য বাধ বাধিয়া আটকায় ? ৰিলাতী ক্ষমতাও কম নহে। দিবারাত্র ইটপাথর ফেলিয়া স্পারের আয়তন বৃদ্ধি করা হইতেছে। যেখানে একটু দমিয়া যাইতেছে, মুহূর্ত মধ্যে ইটপাথর ফেলিয়া পূর্ণ করিয়া দিতেছে। চব্বিশ ঘণ্টা অনবরত লোক খাটিতেছে। কোম্পানীর ইটপাথর যাহা যেখানে ছিল সমুদায় স্পারের কল্যাণে পদ্মার জলে নিক্ষিপ্ত হইল। এখন আর রক্ষার উপায় নাই ! ইটপাথরের জোগাড করিতে পারিলেণ্ড-বা আশা ছিল ।