পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মোতিঝিল
১০১

কুহুধ্বনি ও সলিলরাশির কল কল রব শুনিতে শুনিতেই তাঁহার সময় অতিবাহিত হইত। বৈদেশিক ভ্রমণকারিগণ মোতিঝিলের রমণীয় দৃশ্য দেখিয়া মোহিত হইতেন। কিণ্ডার্সলি স্বীয় পত্রে মোতিঝিলের কথা লিখিয়াছেন। তিনি মোতিঝিলের প্রাসাদের ভিন্ন ভিন্ন চত্বর এবং ক্ষুদ্র ও অন্ধকারময় প্রকোষ্ঠের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। ১৭৮৩ খ্রীঃ অব্দের অক্টোবর মাসে জেমস ফর্বেস মুর্শিদাবাদে আসিয়া মোতিঝিল দর্শন করিয়াছিলেন। তিনি ইহার অশ্বপাদুকাবৎ আকার, সুন্দর উদ্যান ও প্রাসাদের কথা স্বীয় ভ্রমণবৃত্তান্তে লিখিয়া গিয়াছেন। কিন্তু সেই সময় হইতে ঐগুলির ভগ্নদশা উপস্থিত হয়।[১] মোতিঝিল অনেকদিন পর্যন্ত ইংরেজদিগের রাজকার্যসংক্রান্ত প্রধান স্থান ছিল। অনন্তর ১৭৮৫।৮৬ অব্দে মাদাপুর তাহার স্থান অধিকার করে।

 মোতিঝিলের পশ্চিমতীরস্থ প্রাসাদ ক্লমে ভগ্নদশায় পতিত হইতেছিল দেখিয়া, নবাব মনসুর আলি খাঁর সময়ে রাজা প্রসন্ননারায়ণ দেবের আদেশে উহা একেবারে ভাঙ্গিয়া ফেলা হয়। এক্ষণে কেবল তাহার ভিত্তিভূমি মাত্র অবশিষ্ট আছে। অদ্যাপি স্থানে স্থানে দুই-এক খণ্ড কৃষ্ণ মর্মর-প্রস্তর দৃষ্ট হইয়া থাকে। নওয়াজেস মহম্মদ খাঁর কৃত মস্‌জেদটি এখনও তিনটি গম্বুজ মস্তকে ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান রহিয়াছে। মস্‌জেদের প্রাঙ্গণে, একটি প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে ৪টি সমাধি বিদ্যমান আছে। তন্মধ্যে ২টি শ্বেত ও ১টি কৃষ্ণমর্মর প্রস্তরমণ্ডিত এবং অপরটি ইষ্টকনির্মিত। শ্বেতমৰ্মরমণ্ডিত সমাধি দুইটি নওয়াজেস্‌ মহম্মদ খাঁ ও এক্রাম উদ্দৌলার সমাধি। কৃষ্ণ মর্মরের সমাধিটি এক্রাম উদ্দৌলার শিক্ষকের। প্রাচীরের বাহিরে আর একটি ইষ্টকের সমাধি আছে। সেটি নওয়াজেস মহম্মদ খাঁর সেনাপতি সমসের আলি খাঁর। প্রাচীরের মধ্যস্থ ইষ্টকের সমাধিটি এক্রাম উদ্দৌলার ধাত্রীর। মস্‌জেদের নীচে মোতিঝিলের একটি বাঁধা ঘাট আছে; তথায় বসিয়া মুর্শিদাবাদের নিষ্কর্মা পেন্সনভোগী মুসলমানগণ মৎস্যবংশ ধ্বংস করিয়া থাকেন। পূর্বে মেতিঝিলে অনেক মৎস্যের নাসিকায় মুক্তাসমম্বিত সোনার নত দেওয়া ছিল। মোতিঝিলের পশ্চিম-পাশ্বস্থ প্রাচীন তোরণদ্বারের ভগ্নাবশেষ আজিও বিদ্যমান আছে। বর্তমান বৃক্ষবাটিকা তাহা হইতে দূরে অবস্থিতি করিতেছে। অশ্বপাদবৎ যে-ভূভাগ ঝিলবেষ্টিত, তাহার উত্তর ভাগে একখানি নূতন বাঙ্গালা র্নিমিত হইয়াছে। বাঙ্গালাখানি দেখিতে অতি সুন্দর, পর পার হইতে উহা বড়ই মনোহর বোধ হয়। মোতিঝিলের নিকট ক্রিস্টফার কেটিং-এর শিশু পুত্র ইয়ান কেটিং-এর সমাধি আছে। সমাধিস্থ অঙ্কিত প্রস্তরখানি মস্‌জেদ বাটীতে রক্ষিত হইয়াছে।[২] ক্রিস্টফার কেটিং ১৭৭৪ খ্রীঃ অব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মুর্শিদাবাদ টাঁকশালের অধ্যক্ষ হন; অনন্তর ১৭৯৪ খ্রীঃ অব্দে তিনি আপীল আদালতের জজ হইয়াছিলেন। পূর্বে

  1. Forbes's Oriental Memoirs (2d. Ed.), Vol. II, p. 449.
  2. প্রস্তরখণ্ডে এইরূপ লিখিত আছে যে, ইয়ান কেটিং ১৭৭৯ খ্রীঃ অব্দের ২০শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ও ১৭৮৮ খ্রীঃ অব্দের ৩রা মার্চ প্রাণ ত্যাগ করেন।