পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৪০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

লিখিয়াছেন যে, লাখবাগে রায়দুর্লভের পরিখা খনিত হইয়াছিল। নবজাত বৃক্ষ হইতে প্রায় ১৬০০ হস্ত দক্ষিণ-পূর্বে গ্রাম্য সমাধিক্ষেত্রের নিকট অর্ধচন্দ্রাকারে বিস্তৃত উচ্চ ভূমিতে মীরজাফরের সৈন্য সমবেত হইয়াছিল বলিয়া প্রতীত হয়। গবর্নমেন্টকর্তৃক যে সৈন্য-সংস্থান প্রদর্শিত হইয়াছে, লোকপ্রবাদের নির্দিষ্ট স্থানসকলের সহিত তাহার সম্পূর্ণ ঐক্য আছে বলিয়া বোধ হয় না। অষ্টাদশ শতাব্দীর পলাশী-প্রান্তরে তেজগর, নূতনগ্রাম, কদমখালি ও লোকনাথপুর প্রভৃতি গ্রাম স্থাপিত হইয়াছে। পলাশী পরগণা কাশীমবাজার-রাজবংশের জমিদারী হওয়ায়, কান্তবাবুর পুত্র রাজা। লোকনাথের নামানুসারে লোকনাথপুরের নামকরণ হইয়াছে বলিয়া কথিত হইয়া থাকে।

 পূর্বে বলা হইয়াছে যে, ক্লাইব যুদ্ধের দিবস রাত্রিতে পলাশীপ্রান্তর হইতে প্রায় তিন ক্রোশ উত্তরে দাদপুর নামক স্থানে শিবির সন্নিবেশ করেন। এই দাদপুর পূর্বে মুর্শিদাবাদের একটি প্রসিদ্ধ চটী ছিল। এখানে নবাবদিগেরও অনেক লোকজন থাকিত। নবাবদিগেরও একটি নিজ বাসস্থান ছিল, তাহাকে নবাববাটী বলিত। নবাববাটীর নিকটস্থ একটি বৃহৎ জলাশয়কে নবাব-বাওড় নামে অভিহিত করা হইত। নবাবদিগের হস্তী, গো প্রভৃতির আবাসস্থানের চিহ্ন অদ্যাপি নির্দেশ করা যায়। সেই সেই স্থানকে আজিও ফিলখানা ও গোখান কহিয়া থাকে। রেনেলের মানচিত্রে এই ফিলখানার উল্লেখ আছে। ফিলখানা হইতে প্রায় অর্ধক্রোশ উত্তরে ক্লাইব শিবির সন্নিবেশ করিয়াছিলেন, রেনেলের মানচিত্রে ঐরূপ দেখিতে পাওয়া যায়। সুতরাং ফিলখানার বর্তমান অবস্থান দেখিয়া সেই শিবিরসন্নিবেশের স্থান-নির্ণয় করিতে হইলে এইরূপ অনুমান হয় যে, এক্ষণে যে-স্থানে দাদপুরের নীলকুঠি আছে, তাহারই সম্মুখে বাদশাহী সড়কের পূর্বপার্শ্বে উক্ত শিবির সন্নিবেশিত হইয়াছিল। দাদপুরেরও এক্ষণে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। ভাগীরথী পূর্বে দাদপুর হইতে প্রায় অর্ধক্রোশ পশ্চিমে প্রবাহিতা ছিলেন, এক্ষণে পূর্বদিকে সরিয়া আসিয়া তাহার কিয়দংশ গর্ভস্থ করিয়াছেন। দাদপুরে কতকগুলি কবর ছিল; বেভারিজ সেগুলি পলাশীতে হত ইংরেজদিগের কবর বলিয়া অনুমান করেন। কিন্তু দাদপুরের প্রাচীন লোকদিগের নিকট তৎসমুদায় নবাবের কর্মচারিগণের কবর বলিয়া শুনা যায়।[১] নবাববাটী ও নবাব-বাঁওড় ভাগীরথীর গর্ভস্থ হইয়া এক্ষণে পশ্চিম তীরে চররূপে পরিণত হইয়াছে।

 দাদপুর হইতে এক ক্রোশ দক্ষিণে ফরীদতলা নামক স্থান, ফরীদতলা ফরীদপুর নামক গ্রামের পূর্বে। এই ফরীদতলায় ফরীদ সাহেব নামে জনৈক ফকীরের সমাধিভবন আছে। সমাধিভবনের প্রবেশদ্বার পূর্বমুখে অবস্থিত; একটি বৃহৎ গম্বুজের নীচে ফরীদ সাহেবের সমাধি। ফরীদ সাহেবের সমাধির পশ্চাঁদ্ভাগে সমাধিভবনের মধ্যেই সিরাজের প্রিয় ও বিশ্বাসী সেনাপতি মীরমদন শায়িত

  1. দাদপুরের নীলকুঠিতে Maddey সাহেব নামে তাহার অধ্যক্ষের একটি কবর আছে; তাহাকে সাধারণ লোকে মতি সাহেব কহিয়া থাকে।