পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৬৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

রাজমহলে রাজধানী স্থাপন করেন। সুজা অনেক মনোহর অট্টালিকা নির্মাণ করিয়া রাজমহলকে অধিকতর শোভাশালী করিয়াছিলেন। তাঁহার নির্মিত অট্টালিকার মধ্যে সিংদালান নামে একটি বাটীর কিয়দংশ আজিও গঙ্গাতীরে বিদ্যমান আছে। উহার কষ্টিপ্রস্তর নির্মিত অনেকগুলি স্তম্ভ আজিও সুজার শিল্পানুরাগের পরিচয় দিতেছে। সুজার পর রাজধানী পুনর্বার ঢাকায়, পরে তথা হইতে মুর্শিদাবাদে অন্তরিত হয়। মীর কাসেম মসনদে বসিয়া মুর্শিদাবাদ একরূপ ত্যাগই করিয়াছিলেন। তিনি মুঙ্গেরে অবস্থিতি করিতেন এবং বিহারের যাবতীয় স্থান তিনি সুরক্ষিত ও সুশোভিত করিতে যত্ন পাইয়াছিলেন। রাজমহলে নির্জনবাস করিবার জন্য তিনি নাগেশ্বরবাগ নামক রমণীয় উদ্যানে একটি মনোরম অট্টালিকা নির্মাণ করেন। রমণীপরিবৃত হইয়া বিশ্রামসুখ অনুভব করিবার জন্য ইহা নির্মিত হইয়াছিল। কিন্তু তিনি সে বিশ্রাম ভোগ করিবার অবকাশ পান নাই। রাজমহলকে তিনি সুরক্ষিত করিতেও চেষ্টা করিয়াছিলেন। উধূয়ানালা রাজমহলের নিকটেই অবস্থিত, উধূয়ার উপত্যকা সৈন্যগণের অবস্থানের একটি সুন্দর স্থান। ইংরেজদিগের সহিত বিবাদ আরম্ভ হইলে, মীর কাসেম উধূয়ার পার্বত্যপথ অধিকার করিয়া সেই সুদৃঢ় স্থানে সৈন্যসমাবেশপূর্বক, ইংরেজদিগের বিহার-প্রবেশে বাধাপ্রদানে ইচ্ছা করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার সে ইচ্ছা পূরণ হয় নাই।

 মীর কাসেম প্রথমতঃ ইংরেজদিগের সাহায্যেই বাঙ্গলার সুবেদারী লাভ করিয়াছিলেন। মীরজাফরের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়ায়, ইংরেজেরা মীরজাফরকে নামমাত্র নবাব স্বীকার করিয়া, প্রথমে মীর কাসেমকে তাঁহার সহকারিরূপে রাজ্যশাসনের ভার দিতে ইচ্ছা করেন। কলিকাতার গবর্নর ভান্সিটার্টসাহেব সেইজন্য মুর্শিদাবাদে আসিয়া মীরজাফরকে অনুরোধ করিলে, তিনি তাহাতে অস্বীকৃত হওয়ায়, ইংরেজেরা বলপূর্বক মীর কাসেমকে সিংহাসন প্রদান করেন। মীরজাফর অগত্যা মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় বাস করিতে বাধ্য হন। মীর কাসেম সিংহাসনে আরোহণ করিয়া, বিহার অভিমুখে যাত্রা করেন। সেই সময়ে বাদশাহ আলমগীরের পুত্র আলি গওহর (পরে শাহ আলম), বিহার আক্রমণের চেষ্টা করিতেছিলেন। অতঃপর ইংরেজ ও মীর কাসেমের সহিত শাহ আলমের সন্ধি স্থাপিত হইলে, মীর কাসেম বিহারে অবস্থান করিবার ইচ্ছা করিয়া মুঙ্গেরদুর্গ সুদৃঢ় করেন ও তথায় অবস্থিতি করিতে থাকেন। এই সময়ে বাণিজ্যঘটিত শুল্কব্যাপার লইয়া ক্রমে ইংরেজদিগের সহিত মীর কাসেমের বিবাদ বাধিয়া উঠে। প্রথমতঃ ইংরেজদিগের মধ্যে দুইটি দল হইয়াছিল। এক দল মীর কাসেমের পক্ষপাতী; এই দলের মধ্যে গবর্নর ভান্সিটার্ট, ওয়ারেন হেস্টিংস প্রভৃতি প্রধান। অন্য দল নবাবের ঘোরতর বিপক্ষ; এলিস, আমিয়ট প্রভৃতি কাউন্সিলের সভ্যগণ সেই দলের নেতা। এলিস পাটনা কুঠির অধ্যক্ষ নিযুক্ত হইয়া, মীর কাসেমকে অপদস্থ করিতে চেষ্টা করায়, তাঁহার প্রতি নবাবের অত্যন্ত ক্রোধ উপস্থিত হয়। এই ক্রোধের জন্য অবশেষে আমিয়ট ও এলিস দুই জনকেই প্রাণ বিসর্জন দিতে হইয়াছিল।