পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৮২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


ভবানীর একমাত্র কন্যা তারার স্থাপিত গোপালমন্দির। এই মন্দিরমধ্যে কৃষ্ণপ্রস্তরনিমিত গোপালমূতি বিরাজিত। গোপালমৃতিটি মনোমুগ্ধকরী। গোপাল হস্তপ্রসারণপূর্বক যেন কিছু প্রার্থনা করিতেছেন। মন্দিরের বারান্দায় একটি ফোয়ার। রহিয়াছে; মন্দিরের শিলালিপিতে এইরূপ লিখিত আছে:—

“খর্শনমিত্রশকে শ্রীভবানীতনুসম্ভব।
নির্মমে শ্রীমতী তারা শ্রীমদৃগোপালমন্দিরম্॥”


 গোপালমন্দির-বাটীতে একটি শিব প্রতিষ্ঠিত আছেন। মন্দির-বাটতে প্রবেশ করিতে হইলে দ্বারের দুই পার্শ্বে তারেশ্বর নামে দুই শিব দৃষ্ট হন। মন্দিরের বাহির চত্বরে গোপালের একটি পর্বমন্দির আছে। দোল প্রভৃতি পর্বোপলক্ষে তথায় গোপালের আগমন হইয়া থাকে। গোপালের সেবারও বেশ সুবন্দোবস্ত আছে। গোপালমন্দিরের পশ্চাতে অর্থাৎ উত্তর দিকে একটি শুষ্ক বিশ্বতলায় রাজা রামকৃষ্ণের পঞ্চমুণ্ডীর আসন। বেদীর চিহ্ন আজিও দেখিতে পাওয়া যায়। তাহারই নিকট গোপাল পুষ্করিণী। গোপালমন্দিরের দক্ষিণে রাজরাজেশ্বরীভবন। রাজরাজেশ্বরীবাটীর তিন দিকের গৃহ ভগ্ন হইয়া গিয়াছে, পূর্বে এই বার্ট কিরূপ সমারোহময় ছিল, ইহার ভগ্নাবস্থা হইতে তাহার কতক পরিচয় পাওয়া যায়। কেবল উত্তর দিকে মাতার মন্দিরটিমাত্র বর্তমান আছে। এই মন্দিরমধ্যে এক বিশাল বেদীর উপর দশভুজ সিংহবাহিনী রাজরাজেশ্বর বিরাজ করিতেছেন। যাঁহার কৃপায় রানী ভবানী রাজরাজেশ্বরী বলিয়া প্রসিদ্ধা হইয়াছিলেন, তিনি আজিও মন্দির উজ্জ্বল করিয়া অবস্থিতা আছেন। এই রাজরাজেশ্বরী মূতি স্বয়ং রানী ভবানী-কর্তৃক স্থাপিত।

 রাজরাজেশ্বরীর বামে জয়দুর্গ ও করুণাময়ী মূতি আছেন; তাহারাও দশভুজা। জয়দুর্গ রাজা রামজীবনের স্থাপিত এবং করুণাময়ী রানী ভবানীর পিরালয়ে অবস্থিতি করিতেন।

 রাজরাজেশ্বরী, জয়দুর্গ, করুণাময়ী তিন মূতিই পিত্তলময়ী। রাজরাজেশ্বরীভবনে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে মদনগোপালের মন্দির। মদনগোপালের মূতি দারুময়ী। মদনগোপাল রাজশাহীর প্রসিদ্ধ জমিদার রাজা উদয়নারায়ণের বিগ্রহ বলিয়া কথিত। উদয়নারায়ণের সমস্ত জমিদারী রাজা রামজীবনের হস্তে আসায় নাটোরবংশীয়েরা তাহার স্থাপিত মদনগোপালের যথারীতি সেবা করিয়া থাকেন। রাজা বিশ্বনাথ বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করায়, মদনগোপালের সেবার সুবন্দোবস্ত করিয়া দেন।

  মদনগোপালমন্দিরে মহালক্ষী ও হয়গ্রীব আছেন। হয়গ্রীব কুসুমখোলার কুসুমেশ্বরের বিগ্রহ বলিয়া কথিত। মদনগোপালের মন্দিরের পূর্ব-দক্ষিণে চারি বাঙ্গলার মন্দির। এই চারি বাঙ্গলার শিম্পকার্য অতীব প্রশংসনীয়। বড়নগরসমাগত প্রত্যেক লোকই ইহার শিল্পকার্য


৫ খশুনামিত্র—১৭oo।