পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২১২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


সম্পন্ন হওয়া কঠিন মনে করিয়া, তিনি শেখ ওমারউল্লাকে হুগলীর ফৌজদারী প্রদান করেন। নন্দকুমার সেই সময়ে মুশিদাবাদে ইয়ারবেগের হিসাব-নিকাশাদি বুঝাইতেছিলেন। তিনি হুগলীর দেওয়ানীর জন্য আবেদন করিলে, র্তাহার আবেদন গ্রাহ্য হইল। কারণ তৎকালে র্তাহার ন্যায় চতুর ও কার্যদক্ষ জনৈক লোকের বিশেষ প্রয়োজন হইয়া উঠিয়াছিল এবং পূর্বে দেওয়ানী কার্য করায়, তাহার উক্ত কার্যে বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল; এজন্য তিনি পুনর্বার ওমারউল্লার দেওয়ানী-পদে নিযুক্ত হইলেন। কিছুদিন পরে ওমারউল্লার পদচ্যুতি ঘটে। তখন নবাব সিরাজউদ্দৌলা নন্দকুমারকে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করিয়া এবং তাহার বুদ্ধিমত্তা ও কার্যদক্ষতা বিশেষরূপে অবগত থাকায় হুগলীর ফৌজদার নিযুক্ত করিয়াছিলেন।

 সেই সময়ে কর্ণেল ক্লাইব ফরাসীদিগের নিকট হইতে চন্দনগর অধিকার করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। চন্দননগর অধিকার করিতে গেলে, নবাবের রাজ্যের মধ্যে অনেক উৎপাত করিতে হয়। যদিও ১৭৫৭ খ্রীঃ অব্দের ৯ই ফেব্রুয়ারি ইংরেজদেগের সহিত নবাবের যে সন্ধি স্থাপিত হয় এবং তদনুসারে ইংরেজের নবাবের রাজ্যে কোনরূপ গোলযোগ করবেন না বলিয়া প্রতিশ্ৰুত হন, তথাপি র্তাহারা সে প্রতিজ্ঞ কমে ভঙ্গ করিতে আরম্ভ করেন। নবাব তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, এজন্য তিনি ইংরেজদিগকে চন্দননগর আক্ৰমণ করিতে নিষেধ করিয়া রাজা দুর্লভরামের অধীন একদল সৈন্য হুগলীতে পাঠাইয়া দিলেন, এবং প্রয়োজন হইলে, ফরাসীদিগের সাহায্যার্থ নন্দকুমারকে চেষ্টা করিতে লিখিয়া পাঠাইলেন। ইংরেজেরা দেখিলেন যে, বিষম অনর্থ উপস্থিত; এই সময়ে যদি নবাবসৈন্য হুগলীতে আসিয়া উপস্থিত হয়, এবং নন্দকুমারের ন্যায় চতুর ফৌজদার যদি ইংরেজদিগের কৌশল বুঝিতে পারেন, আর তিনি ফরাসীদিগের সাহায্যের জন্য অগ্রসর হন, তাহা হইলে চন্দননগর আক্ৰমণ করা দুরূহ হইবে। এইজন্য তলে তলে তাহারা আমীরচাঁদকে (উমিচাঁদ) দিয়া নন্দকুমারকে হস্তগত করিতে চেষ্টা করিলেন। আমীরচাদ হুগলীতে উপস্থিত হইয়া নন্দকুমারকে ইংরেজদেগের বলবীর্যের কথা জানাইয় তাহদের সহিত বন্ধুত্বস্থাপনের জন্য র্তাহাকে অনুরোধ করিলেন। তিনি নন্দকুমারকে জানাইলেন যে, জগৎশেঠ প্রভৃতি যাবতীয় প্রধান কর্মচারী ইংরেজদিগের সহায়তা করিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছেন। যে পক্ষে জগৎশেঠ, সে পক্ষের জয় অবশ্যম্ভাবী এবং সিরাজের প্রত্যেক কর্মচারী ও দেশের সকলে ইংরেজদেগের সহায়তা করিতে প্রস্তুত; এরূপ ক্ষেত্রে সিরাজের রাজ্যচুতি নিশ্চয়ই ঘটিবে। অতএব আপনার ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য ইংরাজদিগের সহিত বন্ধুত্বস্থাপন করা উচিত।

 নন্দকুমার অনেক বিবেচনার পর সিরাজের ভবিষ্যৎ বাস্তবিকই ঘোরতর অন্ধকারময় দেখিয়া, ইংরেজদেগের সহিত বন্ধুত্বস্থাপনের ইচ্ছা করিলেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ বলিয়া থাকেন যে, ইরেজেরা সেই সময়ে আমীরচাদকে দিয়া নন্দকুমারকে ১২ooo