পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৩০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

 ১৭৬৯ খ্রীঃ অব্দে ভের্লেস্টসাহেব বিলাতযাত্রা করিলে, কাটিয়ারসাহেব তাহার স্থানে কাউন্সিলের সভাপতি ও গবর্নর নিযুক্ত হন। কাটিয়ারসাহেবের সময়েই বাঙ্গালা ১১৭৬ সালে ইংরেজী ১৭৭০ খ্রীঃ অব্দে বাঙ্গালায় ভীষণ দুভিক্ষ উপস্থিত হয়। ইহাকেই সাধারণতঃ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ কহিয়া থাকে। এই ছিয়াত্তরে মন্বন্তরের সময় বাঙ্গলার নায়েব-সুবা ও নায়েব-দেওয়ান মহম্মদ রেজা খাঁর অত্যাচারে দেশের যাবতীয় লোক অত্যন্ত কষ্ট পাইয়াছিল। সেইজন্য তাঁহার নামে অভিযোগ উপস্থিত হয়। তন্মধ্যে প্রধান দুইটির বিষয় উল্লেখ করা যাইতেছে। প্রথমটি, রেজা খা ঁদুভিক্ষের সময় বাজারের সমস্ত চাউল ক্লয় করিয়া একচেটিয়া করিয়া রাখেন এবং অত্যন্ত উচ্চদরে সে সমস্ত বিক্রয় করেন। দ্বিতীয়টি, তিনি সাধারণ তহবিলের অনেক অর্থ অপব্যয় ও আত্মসাৎ করিয়াছিলেন। ইহার পর কার্টিয়ারসাহেব পদত্যাগ করিলে, ১৭৭২ খ্রীঃ অব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস তাহার স্থলে গবর্নর নিযুক্ত হন। ডিরেক্টরগণ তাঁহাকে মহম্মদ রেজা খাঁর বিচার করিতে বলেন। হেস্টিংস মুশিদাবাদের রেসিডেন্ট মিডল্টন সাহেবের প্রতি রেজা খাঁকে বন্দী করিয়া কলিকাতায় পাঠাইতে আদেশ দেন। তদনুসারে মিডল্টন রেজা খাঁকে তাঁহার বাসস্থান মুর্শিদাবাদের নেসাতবাগ হইতে বন্দী করিয়া কলিকাতায় পাঠান। এই সময়ে পাটনার দেওয়ান সেতাবরায়েরও বিচার উপস্থিত হয়।

 হেস্টিংস মহম্মদ রেজা খাঁর বিচার করিতে আরম্ভ করিয়া, তাহার সমস্ত অপরাধের প্রমাণের জন্য উপযুক্ত লোকের অন্বেষণ করিতে লাগিলেন। নন্দকুমার ব্যতীত আর কে সেই সমস্ত দোষের কথা বিশেষ করিয়া জানিতে পারে? বাস্তবিক বঙ্গরাজ্যের ঘটনাসমূহ নন্দকুমার বিশেষরূপে অবগত ছিলেন। তাঁহার ন্যায় বঙ্গদেশকে কেহ আপনার বলিয়া মনে করিত না। বঙ্গরাজ্যের কি শাসন, কি রাজস্ব, সমস্ত বিষয়েরই তিনি সংবাদ রাখিতেন এবং যেখানে অত্যাচার ঘটিত, লোকে সর্বাগ্রে তাঁহাকেই তাহার প্রতিকারের জন্য অনুরোধ করিত। হেস্টিংস নন্দকুমারের প্রতি পূর্ব হইতে বিরক্ত থাকিলেও, উপস্থিত কার্যোদ্ধারের জন্য মহম্মদ রেজা খাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণসংগ্রহের জন্য নন্দকুমারকে নিযুক্ত করিলেন। শুধু হেস্টিংস যে নিজেই

- - - - - - - - - - - -

লোকদিগের পরামর্শে ঘটিয়াছিল বলিয়া ব্যক্ত করিয়াছিল, এরূপ অনুমান অনায়াসে করা যাইতে পারে। বঙ্গসমাজের রীতি অনুসারে ব্রাহ্মণপত্নীর সতীত্বনাশের কলঙ্ক মিথ্যা ঘটনার আঁরোপ দ্বারা প্রক্ষালিত করিরার চেষ্টাই সত্য বলিয়া বোধ হয়। বিশেষতঃ নন্দকুমারের এরূপ অধঃপতন ঘটে নাই যে, তিনি আপনার প্রতিদ্বনদ্বীকে অপদস্থ করার জন্য ব্রাহ্মণ-দম্পতীকে সামান্য অর্থে সন্তুষ্ট করিয়া ব্রাহ্মণপত্নীর সতীত্বনাশের মিথ্যা অপবাদ প্রচার করিতে প্রয়াসী হইয়াছিলেন। যিনি কূটনীতিবিশারদ ছিলেন, তিনি ইহা অপেক্ষা অনেক সদুপায়ে নবকৃষ্ণকে অপদস্থ করিবার চেষ্টা করিতে পারিতেন। তাহার অন্যান্য দোষ থাকিলেও তিনি যেরূপ স্বধর্মভক্ত লোক ছিলেন, তাহাতে ব্রাহ্মণপত্নীর সতীত্বনাশের মিথ্যা অপবাদু সৃষ্টি করা তাহার পক্ষে সম্ভবযোগ্য নহে। আমরা নন্দকুমারের প্রতি এরূপ দোষারোপ কোন মতেই বিশ্বাস করিতে পারি না।