পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৩২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


নিয়োগসম্বন্ধে গ্রেহাম, ডেক্রে, মরেল প্রভৃতি কাউন্সিলের সভ্যেরা আপত্তি করিয়াছিলেন । তাঁহাদের প্রধান আপত্তি এই ছিল যে, গুরুদাসের নিয়োগে নন্দকুমারেরই প্রভুত্ব থাকিবে । যে নন্দকুমার কোম্পানীর বিরুদ্ধে শাহজাদা ও ফরাসীদিগের সহিত চক্লান্ত করিয়াছেন, তাঁহার ক্ষমতাবৃদ্ধি হইতে দেওয়া কদাচ উচিত নহে। হেস্টিংস সে কথা না শুনিয়া গুরুদাসকেই নিযুক্ত করেন।

 এই সময়ে তিনি নন্দকুমারের প্রকৃত চরিত্রসম্বন্ধে নিজের মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছিলেন । আমরা এ স্থলে তাহার সংক্ষিপ্ত মর্ম প্রদান করিতেছি । নন্দকুমারের পরম শত্রু হেস্টিংসের নিকট হইতে তাঁহার প্রকৃত চরিত্রের কিঞ্চিৎ আভাস পাওয়া যে অতীব বিস্ময়কর, তাহাতে সন্দেহ নাই। হেস্টিংস এই সময়ে নন্দকুমারের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন বলিয়া, তাহার প্রকৃত চরিত্রের কথা কিঞ্চিৎ প্রকাশ করিয়াছিলেন । নন্দকুমারচরিত্রের প্রতি যাঁহাদের ঘৃণা আছে, তাঁহারাও হেস্টিংসের মন্তব্যটি একটু মনোযোগ সহকারে পাঠ করিবেন। হেস্টিংস এই রূপ লিখিয়ছিলেন যে, “নন্দকুমার প্রকৃত কর্মচারী ও মন্ত্রীর ন্যায় স্বীয় প্রভুর কল্যাণের ও ক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য বৈদেশিকগণের সাহায্যগ্রহণের ও কোম্পানীর ক্ষমতাহাসের চেষ্টা করিয়াছিলেন । নবাব মীরজাফর তাঁহাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করিতেন। মীরজাফর কখনও উহাকে অবিশ্বাস্য বলিয়া তাঁহার প্রতি দোষারোপ করেন নাই । নন্দকুমার যে সমস্ত রাজনৈতিক ব্যাপারে লিপ্ত ছিলেন, তৎসমুদায় কেবল তাহার প্রভুর মঙ্গল ও ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই সংসাধিত হইত। মীরজাফরের মঙ্গলের সহিত তাঁহার নিজের স্বার্থের যে সংস্রব ছিল না, এমন নহে । তাহারও কিঞ্চিৎ মিশ্রণ ছিল । মীরজাফর তাঁহার প্রতি যে কিরূপ সন্তুষ্ট ছিলেন, তাঁহার রাজত্বের প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁহাকে যেরূপ রাজসম্মানে সম্মানিত করিয়াছিলেন, তদ্বারা তাহা যথেষ্টরূপে সপ্রমাণ হয়। নন্দকুমারের দ্বারা যে সকল কার্য সংসাধিত হইয়াছে, তাহার অধিকাংশ আমাদের বিরুদ্ধ হইলেও, সত্য কথা বলিতে গেলে, ইহা তাঁহার পক্ষে কোন মতে নিন্দনীয় নহে ; বরং প্রশংসনীয়। তিনি স্বীয় প্রভুর স্বাধীনতাবিস্তারের জন্য বাদশাহের নিকট হইতে সনন্দ আনাইয়াছিলেন এবং পাছে তাঁহার ক্ষমতার হ্রাস হয়, তজ্জন্য মহম্মদ রেজা খাঁর নিয়োগসম্বন্ধে আপত্তি করিয়াছিলেন ।”২৯

 বাস্তবিক নন্দকুমারসম্বন্ধে বিবেচক ব্যক্তিমাত্রেরই এই মত। র্তাহার শত্ৰুপক্ষীয়গণ মনে মনে ইহাই বিশ্বাস করিতেন । কিন্তু আপনাদিগের জেদ ও খাতির রক্ষার জন্য তাহার অযথা নিন্দা করিয়াছেন । নন্দকুমারেরর প্রতি হেস্টিংসের বিদ্বেষভাব সেই সময়ে প্রশমিত হওয়ায়, তিনি তাহার চরিত্রসম্বন্ধে প্রকৃত কথাই প্রকাশ করিয়াছিলেন । পরম শত্রু হেস্টিংসের কথা তদীয় চরিত্রের মহত্ত্বপ্রতিপাদনের পক্ষে অল্প প্রামাণ্য

 ২৯ Minute of the Committee or Circuit of Kasimbazar, 28th July, 1772.