পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৩৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

জেনারেল ও চারিজন সভ্যের মধ্যে বারওয়েলসাহেব পূর্ব হইতেই এখানে ছিলেন। অন্য তিন জন-ক্লেভারিং, মন্সন ও ফ্রান্সিস এবং সুপ্রীমকোর্টের প্রধান জজ ইলাইজা ইম্পে এবং চেম্বার্স, হাইড ও লেমসেটয়ার নামে অপর জজত্রয় ১৭৭৪ খ্রীঃ অব্দের এপ্রিল মাসে ইংলণ্ড হইতে যাত্রা করিয়া ১৯শে অক্টোবর কলিকাতার চাঁদপাল-ঘাটে আসিয়া উপস্থিত হন। তোপধ্বনি প্রভৃতিতে তাঁহাদিগকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এই নবাগতদিগের মধ্যে সদস্যগণের সহিত গবর্নরের বিরোধ ও বিচারকদিগের সহিত তাঁহার বন্ধুত্ব স্থাপিত হইল। ইম্পেসাহেব হেস্টিংসসাহেবের সহপাঠী-বন্ধু ছিলেন; এইজন্য বিচারকদিগের সহিত তাঁহার বন্ধুত্ব সংস্থাপিত হইয়াছিল।

 এইরূপ পক্ষাপক্ষে বাঙ্গলায় মহান অনর্থ উপস্থিত হয় এবং তাহা কোম্পানীর রাজত্বের গাঢ় কালিমা বলিয়া উল্লিখিত হইয়া থাকে। নবাগত সদস্যত্রয় দেশের শাসনকার্যের অনুসন্ধান করিতে আরম্ভ করিয়া, ক্রমাগত হেস্টিংসসাহেবের উৎকোচগ্রহণ ও অত্যাচারের প্রমাণ পাইতে লাগিলেন। এই সময়ে নন্দকুমারের সহিত তাঁহাদের পরিচয় হওয়ায়, তাঁহারা তাঁহাকে হেস্টিংসসাহেবের সমস্ত দোষের তালিকা প্রদান করিতে অনুরোধ করেন। তজ্জন্য তিনি হেস্টিংসের দোষ সপ্রমাণ করিতে আরম্ভ করিলেন। সেই সময়ে বর্ধমানের মৃত মহারাজ তিলকচাদের পত্নী হেস্টিংসের অত্যাচারের জন্য কাউন্সিলে অভিযোগ উপস্থিত করিয়াছিলেন। তাহার পর, নন্দকুমার প্রকাশ্যভাবে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে এক আবেদন-পত্র প্রদান করেন। উক্ত আবেদন-পত্র ১৭৭৫ খ্রীঃ অব্দের ৮ই মার্চ তারিখে লিখিত হয়। ১১ই তারিখে কাউন্সিলে ফ্রান্সিস উক্ত পত্র উপস্থাপিত করিয়াছিলেন। পত্রখানি অত্যন্ত দীর্ঘ; বর্তমান প্রবন্ধে তাহার আনুপূর্বিক উল্লেখ করা দুঃসাধ্য। আমরা সংক্ষেপে তাহার মর্ম প্রদান করিতেছি।

 নন্দকুমার প্রথমতঃ মীর কাসেমের সহিত যুদ্ধের সময় ইরেজদেগের কিরূপে সাহায্য করিয়াছিলেন, তাহার উল্লেখ করিয়া, মহম্মদ রেজা খাঁর কাহিনী জ্বলন্ত ভাষায় বর্ণনা করেন। পরে হেস্টিংসসাহেব মান্দ্রাজ হইতে গবর্নর হইয়া আসিলে, তাহার সহিত কিবৃপে বন্ধুত্ব হয়, এবং কাউন্সিলের সভ্যেরা বিলাত হইতে কলিকাতায় আসিলে, হেস্টিংস যেরূপ অন্যান্য দেশীয় ব্যক্তিদিগকে তাঁহাদের সহিত পরিচিত করাইয়াছিলেন, নন্দকুমার তাঁহার নিকট সেইরূপ পরিচয়ের প্রার্থনা করিলে, হেস্টিংস নিজ শত্রুপক্ষের সহিত তাঁহার যোগ আছে বলিয়া, তাঁহার আবেদন অগ্রাহ্য করেন এবং অবশেষে এলিয়টু নামে কোন সাহেবকে তাঁহার পরিচয়ের জন্য আদেশ দেন। এই এলিয়ট্‌ নন্দকুমারের মোকর্দমায় দ্বিভাষীর কার্য করিয়াছিলেন।

 এই সময়ে নন্দকুমারের পরম শত্রু বর্ধমানের রেসিডেন্ট গ্রেহাম সাহেবের সহিত হেস্টিংসের পরামর্শ চলিতেছিল। নন্দকুমার উল্লেখ করেন যে, হেস্টিংস স্পষ্টাক্ষরে তাঁহাকে বলিয়াছেন যে, এখন হইতে আমি তোমার শত্রু হইলাম এবং তোমার অনিষ্ট করিতে ক্ষান্ত হইব না। তাহার পর, মোহনপ্রসাদ নামে নন্দকুমারের একজন শত্রু