পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২৫৯


মহানন্দ-কর্তৃক ভদ্রপুর হইতে কুঞ্জঘাটার বাটতে আনীত হইয়াছেন। নন্দকুমার ভদ্রপুরে তাঁহার রানী ক্ষেমঙ্করীর পুণ্যার্থে রানীসায়র নামে একটি বৃহৎ পুষ্করিণী খনন করাইয়াছিলেন। তাহারই নিকটে রাজা গুরুদাসের নিখাত সুবৃহৎ গুরুসায়র পুষ্করিণী। সেই পুষ্করিণী দুইটি কুঞ্জঘাটার বর্তমান কুমার-কতৃক সংস্কৃত হইয়া, অদাপি বিরাজ করিতেছে। নন্দকুমারের বাসবার্টীর চিহ্ন এখনও ভদ্রপুরে দেখিতে পাওয়া যায়। জন্মভবনের চিহ্ন ও তাঁহার নিমিত দেওয়ানখানা অদ্যাপি বিরাজিত আছে। ১১৮১ সালের ২৯শে ভাদ্র তাহার দেওয়ানখানার তীর দেওয়ালের উপরে সন্নিবেশিত হইয়াছিল |৪৯

 মহারাজ নিজের চেষ্টায় যথেষ্ট ধনোপার্জন করিয়াছিলেন; কিন্তু তাহার সমস্তই সৎকার্যে ব্যয় করিতেন। শেষ জীবনে যদিও তিনি আর কিছু উপার্জন করিতে পারেন নাই, তথাপি মৃত্যুকালে ৫২ লক্ষ টাকা সঞ্চিত রাখিয়া যান।৫০ তাহার পুত্র রাজা গুরুদাস সেই সমস্তের উত্তরাধিকারী হইয়াছিলেন। মহারাজ নন্দকুমারের এক পুত্র ও তিন কন্যা ছিল। পুত্রের নাম রাজা গুরুদাস। তিনি গৌড়াধিপতি উপাধি প্রাপ্ত হন। কন্যা তিনটির নাম সম্মানী, আনন্দময়ী ও কিনুমণি। রতনমণি নামে তাঁহার কোন কন্যার নাম শুনা যায়; উক্ত তিন কন্যার মধ্যে কাহারও নাম রতনমণি ছিল, অথবা রতনমণি তাঁহার অন্য এক কন্যা ছিলেন, তাহা আমরা অবগত নহি। তাহার কন্যা সম্মানীর সহিত কুঞ্জঘাট রাজবংশের আদিপুরুষ জগচ্চন্দ্রের বিবাহ হয়। নন্দকুমারের কোন্‌ কন্যার সহিত তাঁহার প্রিয় জামাতা রায় রাধাচরণের বিবাহ হইয়াছিল, তাহাও বলিতে পারা যায় না। রাধাচরণের বাট হুগলীর নিকটে ছিল। তাঁহার আর এক জামাতা ভদ্রপুরেই বাস করিতেন। জগচ্চন্দ্রের প্রতি মহারাজ তাদৃশ সন্তুষ্ট ছিলেন না। গুরুদাসের প্রতি জগচ্চন্দ্র হিংসা প্রকাশ করায়, মহারাজ জগচ্চন্দ্রের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং তাহার প্রধান শবু মোহনপ্রসাদের সহিত জগচ্চন্দ্রের মিত্রতা থাকায়, মহারাজ অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন।”৫১ কিন্তু কোম্পানীর কর্মচারিগণ জগচ্চন্দ্রের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। রাজা গুরুদাসের পর তদীয় পত্নী রানী জগদম্বা নন্দকুমারের সমস্ত সম্পত্তির অধিকারিণী হন। তাঁহার


হয় না। মহারাজ নন্দকুমার মন্দির সম্পূর্ণ করিয়া যাইতে পারেন নাই। মন্দিরনির্মাণের কয়েক বৎসর পর তাহার শোচনীয় পরিণাম ঘটায়, তদ্বংশীয়ের আর মন্দির সম্পূর্ণ করেন নাই। এই মন্দির ও তন্মধ্যস্থ দেবতাসম্বন্ধে অনেক অদ্ভুত ঘটনার প্রবাদ প্রচলিত আছে।

 ৪৯ তীরে এইরূপ লিখিত আছে —“শ্রীশ্রী9লক্ষীনারায়ণজ জয়তি সন_১১৮১ সালে তারিখ ২১ ভাদ্র মারফত দেবেরাম শর্ম।” ১১৮১ সালের ২১-এ ভাদ্র ইংরাজী ১৭৭৪ খ্রীঃ অব্দের ১২ই সেপ্টেম্বর। সুতরাং মহারাজের মৃত্যুর প্রায় এক বৎসর পূর্বে দেওয়ানখানার তাঁর উঠিয়াছিল।

 ৫০ Mutaqherin Trans., Vol. II, p. 406.

 ৫১ পরিশিষ্টে মুদ্রিত পত্রেও এ কথার উল্লেখ আছে।