পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
কাস্তবাবু
২৬৩

গ্রামে বিবাহ করিয়াছিলেন। তাঁহারা জাতিতে তৈলিক বা তিলি। অনেকে তাঁহাদিগকে তেলি বলিয়া ভ্রমে পতিত হন এবং সেইজন্য সাহেবদের মধ্যে কেহ কেহ তাহাদিগকে Oilman বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন।* বর্তমান সময়ে যাহাদিগকে তেলি বলে, তাহারা ইহাদের হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। ইহারা সাধারণতঃ তিলি নামেই অভিহিত হন। তৈলিক বা তিলিগণ নবশাখ শূদ্রের মধ্যে এক শাখা; সুতরাং জাত্যংশে শূদ্রদের মধ্যে তাঁহারা নিতান্ত হন নহেন। রাধাকৃষ্ণের পাঁচ পুত্র ছিল; তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ কৃষ্ণকান্ত; এই কৃষ্ণকান্তই কান্তবাবু বলিয়া সুপরিচিত। রাধাকৃষ্ণ পূর্বপুরুষগণের আরন্ধ রেশম ও সুপারির ব্যবসায় পরিচালন করিতেন। রাধাকৃষ্ণ নিজে ভাল ঘুড়িী উড়াইতে পারিতেন বলিয়া লোকে তাহাকে খলিফা বলিয৷ অভিহিত করত। কাশীমবাজারে ইংরেজ কুঠী ও রেসিডেন্সির নিকটই তাহাদের দোকান ছিল; এজন্য কুঠার লোকদিগের সহিত তাঁহাদের বিশেষ পরিচয় হয়। কৃষ্ণকান্ত বাল্যকালে বাঙ্গল, ফারসী ও সামান্য-রূপ ইংরেজী শিক্ষা করেন। এরূপ জনশ্রুতি আছে যে, কান্তবাবু দুই হাজার ইংরেজী শব্দ কণ্ঠস্থ করিয়াছিলেন, এতদ্ভিন্ন বাঙ্গল হিসাবপত্রেও তাঁহার বিশেষ জ্ঞান ছিল। কাস্তবাবুর বুদ্ধি অত্যন্ত তীক্ষ ছিল; এজন্য তিনি কাশীমবাজারস্থ ইংরেজদেগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

 ইংরেজ বণিকদিগের সহিত ব্যবসায়বিষয়ে সম্পর্ক হওয়ায়, কান্তবাবু রুমে রুমে কাশীমবাজারেই ইংরেজ কুঠতে মুহুরীর পদে নিযুক্ত হন। তিনি বাল্যকাল হইতে আপনাদের রেশমের ব্যবসায় দেখিয়া আসিতেছিলেন; তজ্জন্যে উক্ত বিষয়ে তাহার অভিজ্ঞতা জন্মে। ইংরেজ কুঠীতে রেশমের ব্যবসায়ই প্রধান হওয়ায় এবং সে বিষয়ে তাহার বিশেষ জ্ঞান থাকায়, শীঘ্রই তাহার পদোন্নতি ঘটে। এই সময়ে বঙ্গের প্রথম গবর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের সহিত তাঁহার পরিচয় হয়। ১৭৫৩ খ্রীঃ অব্দের অক্টোবর মাসে নবাব আলিবদা ঁখা ঁমহবং জঙ্গের রাজত্বকালে, ওয়ারেন হেস্টিংস কলিকাতা হইতে কাশীমবাজার কুঠতে আগমন করেন। ক্রমে ক্রমে কাস্তবাবুর সহিত তাঁহার পরিচয় জন্মিলে, কান্তবাবুর কার্যদক্ষতায় তিনি তাঁহার উপর সন্তুষ্ট হন। ওয়ারেন হেস্টিংস এই সময়ে একজন নিম্নতন কর্মচারিমাত্র ছিলেন। এই সময়ে হেস্টিংসেরও কর্তব্যনিষ্ঠার অনেক পরিচয় পাওয়া যায়। ১৭৫৬ খ্রীস্টাব্দের এপ্রিল মাসে নবাব আলিবদা ঁখা ঁইহলোক হইতে বিদায়

 ২ Beveridge's Nundakumar, p. 554.

 ৩ কেহ কেহ বলেন যে, তিলি তৌলিক শব্দের অপভ্রংশ; তৌলিক অর্থে যাহারা তুলাদণ্ড ধরিয়া জীবিকা নির্বাহ করিয়া থাকে। কিন্তু তিলি শব্দ তৈলিক বা তৈলা ঁশব্দেরই অপভ্রংশ। তৈলিকগণ নকশায়ক বা নবশাখগণের অন্যতম। কোনও সময়ে ইহারাও তেলি নামে অভিহিত হইলেও, বর্তমান তেলিগণ তৈলকার বলিয়া পরিচিত। তৈলকারগণ অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট জাতি; সুতরাং বর্তমান সময়ের তেলি হইতে তিলিগণ যে সম্পূর্ণ পৃথক, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। -