পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
কান্তবাবু
২৬৫

অনুসন্ধানে কাশীমবাজারের চতুর্দিকে বিচরণ করিতেছিল; কিন্তু কান্তবাবু তাহাতেও বিচলিত হন নাই। তাহারা যখন অকৃতকার্য হইয়া প্রত্যাবৃত্ত হইল, তখন কান্তবাবু হেস্টিংসের পলায়নের আয়োজন করিয়া দিলেন; হেস্টিংস কান্তবাবুর চেষ্টায় কাশীমবাজার পরিত্যাগ করিলেন। কাশীমবাজার পরিত্যাগসময়ে, তিনি অশ্রুপূর্ণলোচনে, কান্তবাবুর নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ করিলেন এবং তাঁহাকে এক নিদর্শনপত্র দিয়া বলিলেন যে, ঈশ্বর যদি কখন দিন দেন, তাহা হইলে, তিনি যথাসাধ্য তাঁহার প্রত্যুপকার করিবেন। হেস্টিংস এই অঙ্গীকার সর্বতোভাবে পালন করিয়াছিলেন। চতুর্দিকে বিভীষিকার মধ্য হইতে যে উপকারী বন্ধু আপনার প্রাণকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া, বিপদস্তুূপ মস্তকে লইতে অগ্রসর হয়, যাহার হৃদয়ে কণামাত্র মনুষ্যরক্ত আছে, সে তাহার প্রত্যুপকার না করিয়াই থাকিতে পারে না। কান্তবাবু আশ্রয় না দিলে, হয়ত, হেস্টিংস ধৃত হইয়া, অশেষ কষ্ট ভোগ করিতে বাধ্য হইতেন; এমন কি, তাঁহার জীবননাশেরও সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল। এজন্য তিনি কান্তবাবুর উপকার জীবনেও বিস্মৃত হইতে পারেন নাই। ক্লমে ক্ৰমে তাহার যেরূপ পদোন্নতি ঘটিয়াছে, তিনিও তদনুযায়ী কান্তবাবুর উপকার করিয়াছেন। কান্তবাবুর জন্য তিনি মস্তক পাতিয়া অম্লানবদনে কর্তৃপক্ষের তিরস্কারপর্যন্তও গ্রহণ করিয়াছেন, আমরা যথাস্থানে তাহাও দেখাইব।

 পলাশীযুদ্ধের পর যখন মীরজাফর ক্লাইবের সাহায্যে মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে অধিরূঢ় হন, সেই সময় হইতে বাঙ্গলায় ইংরেজদিগের প্রাধান্য স্থাপিত হয়। মীরজাফর ও অন্যান্য নবাবগণ ইংরেজদিগের বিনা পরামর্শে কোন কার্য করিতে সমর্থ হইতেন না। এই সময়ে নবাব-দরবারের অবস্থা সম্যগ্‌রূপে অবগত হইবার জন্য একজন করিয়া ইংরেজ রেসিডেন্টের মুর্শিদাবাদে থাকা আবশ্যক হয়। পূর্বে কাশীমবাজার কুঠীর অধ্যক্ষ নবাব-দরবারে ইংরেজদের আর্জি পেশ করিতেন ও হুকুম আদি লইতেন। এক্ষণে তদ্বিপরীত অর্থাৎ নবাবকে কোন পরামর্শ ও তাঁহাকে কোন বিষয় হইতে নিরস্ত করিবার জন্য, মুশিদাবাদে সর্বদা একজন রেসিডেন্ট থাকিতেন। মোরাদবাগ তাঁহার বাসস্থান নির্দিষ্ট হয়। প্রথমে স্কাফ্‌টনসাহেব এই পদে নিযুক্ত হন। হেস্টিংসের বিচক্ষণতায় সন্তুষ্ট হইয়া, পরে ক্লাইব ১৭৫৮ খ্রীঃ অব্দে তাঁহাকে উক্ত পদ প্রদান করেন। হেস্টিংস পূর্ব হইতে কান্তবাবুর উপকারের জন্য সচেষ্ট ছিলেন কিন্তু সেরূপ উচ্চপদ না পাওয়ায়, সমাগ্‌রূপে কৃতকার্য হইতে পারেন নাই; এক্ষণে অপেক্ষাকৃত উচ্চপদ প্রাপ্ত হইয়া তাহার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। ইহার পর ১৭৬১ খ্রীঃ অব্দে তিনি কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত হন। এই সময় হইতে কোম্পানীর কর্মচারিগণ, নিজ নিজ ব্যবসায়ের পরিচালনা করিতেন। মীরজাফরের রাজত্ব হইতে তাহার সূচনা হয়। ১৭৬০ খ্রীঃ অব্দে মীর কাসেমের রাজ্যাভিষেক হইলে, ইহার আরও বিস্তার ঘটে। গবর্নর হইতে কোম্পানীর সামান্য কর্মচারী পর্যন্ত আপন আপন ব্যবসায় চালাইতে প্রবৃত্ত হন। এতদ্ভিন্ন বে-সরকারী ইংরেজগণও