পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩০২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

মধ্যে কাশীমবাজারে আসিতেন। কলিকাতায় তাঁহার বাসভবন থাকিলেও কাশীমবাজার হইতে তাঁহার ভাগ্যোন্নতির সূচনা হওয়ায়, তিনি ঐ স্থানটিকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন। কিন্তু এই সময় হইতে কাশীমবাজারেরও শ্রীবৃদ্ধির হ্রাস হইতে আরম্ভ হয়। ১৭৮৮ খ্রীঃ অব্দে লালবাগ ও সৈয়দাবাদের মধ্যে একটি খাল কাটা হইয়া ভাগীরথীর উভয় মুখ সংযুক্ত হওয়ায়, কাশীমবাজারের নিম্নস্থ ভাগীরথী ক্রমে বন্ধ বিলে পরিণত হইতে আরম্ভ হয়। সেইজন্য ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে এখানে মহামারী উপস্থিত করিয়া ইহাকে অরণ্যতুল্য করিয়া তুলে।৫৪ তথাপি কান্তবাবু জন্মভূমি বলিয়া তথায় বাস করিতে ভাল বাসিতেন। হেস্টিংসসাহেব ভারত পরিত্যাগ করার পর কান্তবাবু অধিক দিন জীবিত ছিলেন না। স্বয়ং রাজোপাধি গ্রহণ না করায়, সাধারণ লোকে হেস্টিংসের দেওয়ান বলিয়া তাঁহাকে দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত নামে অভিহিত করিত।

 দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত নামে আর এক জন কৃতী পুরুষও মুর্শিদাবাদে ভাগ্যলক্ষ্মীর কৃপা লাভ করেন। ইনি বহরমপুরের সুপ্রসিদ্ধ জমিদার সেনবংশীয়গণের আদিপুরুষ। কলিকাতার দুর্গাচরণ মিত্র-স্ট্রীটস্থ তাঁহার বাসভবন অদ্যাপি দেওয়ানবাটী বলিয়া প্রসিদ্ধ।৫৫ সেন কৃষ্ণকান্ত কোম্পানীর নিমকমহালের দেওয়ান ছিলেন। উভয়েই দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত নামে অভিহিত হওয়ায়, তাঁহাদের প্রসঙ্গ লইয়া পূর্বকালে এতদ্দেশীয় প্রাচীনেরা অনেক সময় গোলযোগ করিতেন।

 কান্তবাবু অনেকবার দার পরিগ্রহ করেন; শেষ পত্নীর গর্ভেই লোকনাথের জন্ম হয়। লোকনাথের মাতার নাম ক্ষুদুমণি। বর্ধমান জেলার কুড়ুম্ব নামক গ্রাম লোকনাথের মাতুলালয়। কাশীমবাজার রাজবংশের আদিপুরুষ ও হেস্টিংসের প্রিয়পাত্র কান্তবাবু আপনার একমাত্র পুত্র লোকনাথকে রাখিয়া বাঙ্গলা ১২০০ সালের পৌষ মাসে জাহ্নবীতীরে জীবন বিসর্জন করেন। তাঁহার অর্জিত বিশাল সম্পত্তি আজিও তাঁহার পরিচয় দিতেছে। কান্তনগর নামে একটি পরগণা তাঁহার নামানুসারে হইয়াছে বলিয়া কথিত আছে। বহরমপুরের পূর্বভাগে ঐ নামের একটি ক্ষুদ্র গ্রামও রহিয়াছে।

 আমরা পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, অর্থলোভে কান্তবাবু কোন কোন অসৎকর্মের অনুষ্ঠান করিলেও, তাঁহার হৃদয় হইতে একেবারে হিন্দুজনোচিত ধর্মভাবের লোপ হয় নাই। তিনি অনেক স্থলে তাহার পরিচয় দিয়াছেন। তাঁহার সম্বন্ধে অনেক গল্প



 ৫৪ টমাস লায়ান সাহেব উক্ত খাল খনন করেন। সেই সময়ে পলাশীর বাঁকও কাটা হয়।

 ৫৫ উক্ত বাটী পূর্বে দুর্গাচরণ মিত্রেরই ছিল। ঐ বাটিতে রামপ্রসাদ “দে মা আমায় তবিলদারী” গান রচনা করিয়া প্রভুর দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। পরে উক্ত বাটী দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত ক্ৰয় করেন।

 সেন্টাল এভিনিউ রাস্তা তৈয়ারী করিবার সময় কলিকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট উক্ত বাটী ভাঙ্গিয়া তাহার উপর দিয়া রাস্তা তৈয়ারী করিয়াছে।