পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পরিশিষ্ট
৪০১

পুত্র শুরুধ্বজ ও নরনারায়ণকে আপনার রাজ্য বিভাগ করিয়া দেন। শুল্কজের পৌত্র রীক্ষিৎ প্রথমে মুসলমানদিগের বশ্যতা স্বীকার করেন। খ্রীস্টীয় ১৬০৩ অব্দে রাজস্ব অনাদায়ের জন্য পরীক্ষিতের রাজ্য মোগলগণ-কর্তৃক আক্রান্ত হয়; পরীক্ষিৎ অতি অপমাত্র ভূভাগের অধীশ্বর থাকেন, তাহার অবশিষ্ট রাজ্য চাকার মোগল শাসনকর্তার অধীন হয়। এই অধিকৃত রাজ্য চারি সরকারে বিভক্ত হয় এবং ১৬৬২ খ্রীঃ অর পর্যন্ত মোগলদিগের অধীন থাকে। উক্ত মরি সরকারের মধ্যে বলাভূম একটি; বহারবন্দ ও ভিতরবন্দ লইয়াই বাঙ্গলাভূম। খ্রীঃ ১৬৬২ অব্দে আরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীরজুম্না আসাম অধিকার করিতে গিয়া পরাজিত হইলে, উক্ত চারি সকারের মধ্যে তিন সরকারের অধিকাংশ ভূভাগ মুসলমানদিগের হস্তচ্যুত হয়; কেবল সরকার বাঙ্গলাভূম তাহাদের অধীন থাকে; সুতরাং ১৬০৩ খ্রীঃ অব্দ হইতে বাহারবন্দ মুসলমান রাজিল্পে অনুভূত হয়। বাঙ্গলজয়ের সঙ্গে ইহা ইংরেজাধিকারে প্রবেশলাভ করে।

 মোঘলগণ-কর্তৃক বাহারবন্দ অধিকৃত হইলে, ইহা অন্যান্য পরগণার ন্যায় রাজস্বআদায়ের জন্য জমিদারদিগের হস্তে অপিত হয়। তৎকালে জমিদারগণ রাজস্ব সংগ্রাহকের কার্য করিতেন। বাহারবন্দ জমিদারগণের হস্তে অপিত হইলে অনেক সময়ে ইহা জায়গীররূপে নিদিষ্ট হইত। চাঁদরায় নামক একব্যক্তি ইহার প্রথম জমিদার বলিয়া উল্লিখিত হন। তাঁহার পর রঘুনাথরায় বাহারবন্দের জমিদারী প্রাপ্ত হন। কুঘুনাথের পর তাহার পত্নী পুণ্যশ্লোক রানী সত্যবতী বহারবন্দের অধিকার সুভ করেন। রানী সত্যবতীর অগণ্য কীতি অদ্যাপি বাহারবন্দ অলকৃত করিতেছে; তাহার স্থাপিত দেবমন্দিরাদি আজিও তাহার পবিত্র নাম প্রচার করিয়া থাকে। রানী সত্যবতীর জীবনকালে বাহারবন্দু নাটোরাধিপ রাজা রামকান্তের হস্তে অপিত হয়। রামকান্তের পত্নী ভারতপ্রসিদ্ধ। দীনপালিনী রানী ভবানী সত্যবতীর আত্মীয়া ছিলেন। সত্যবতী সংসার পরিত্যাগ করিয়া কাশীধামে গমন করায়, ভবানীকে বাহারবন্দ অর্পণ করিয়া যান। এই সময়ে বাহারবন্দ নবাব আলিবর্দী খাঁ মহাবং জজের আদেশে তাহার ভ্রাতুস্পুত্র ও জামাত পণিয়ার শাসনকর্তা সৈয়দ আহম্মদ খ সালৎজঙ্গের নামে জায়গীররূপে নিদিষ্ট হয়; কিন্তু সেরেস্তায় নাটোররাজের নামেই লিখিত থাকে। রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানী স্বীয় জামাতা রঘুনাথরায়কে বাহারবন্দ প্রদান করেন। রঘুনাথের মৃত্যুর পর বাহারবন্দ পুনর্বার নবাব নজমউল্লী দৌলত সৈয়দ নজাবত আলি খাঁর নামে জায়গীররূপে নিদিষ্ট হইয়া মুর্শিদাবাদের অধীন হয়; কিন্তু রানী ভবানীর সম্বন্ধ একেবারে দূর হয় নাই। রাজা গৌরীপ্রসাদ কিছুকাল ইহার জমিদার নিযুক্ত হন; কিন্তু পুনর্বার ইহা রানী ভবানীর হস্তে আগমন করে। কোম্পানীর দেওয়ানীগ্রহণের পর বাঙ্গলা ১১৭৬ অব্দ হইতে ১১৭৮ অব্দ পর্যন্ত ঘনশ্যাম সরকার নামে এক ব্যক্তি ইহার ইজারা লয়। ১১৭৯ সালে ইহা রঙ্গপুর কালেক্টরীর অন্তর্ভূত হয় ও সেই

 

২৬