মায়ের কাছে কইতে বিনোদ মনে লজ্জা পায়।
কেমন কইরা কইব কথা না দেখি উপায়॥
এক দুই তিন করি আষাঢ় মাস যায়।
সাইর সরসিরে[১] বিনোদ বেদনা জানায়॥
একে একে যত কথা উঠল মায়ের কানে।
ঘটক পাঠাইল পরে বিয়ার সন্ধানে॥
এগার উতরিয়া কন্যা বারয় দিল পাও।
দেখিয়া চিন্তিত হইল তার বাপ-মাও॥
ঘুরা[২] না যায় অঙ্গের বসন করে টানাটানি।
তারে দেখ্যা পাড়ার লোকে করে কানাকানি॥
কানাকানি করে কেউ করে বলাবলি।
দিনে দিনে ফোটে কন্যার যৌবনের কলি॥
আষাঢ় মাস হীরাধরের আশার আশে যায়।
বিয়া নাই সে হইল কন্যার কি করি উপায়॥
শায়ন[৩] মাসে বিয়া দিতে দেশের মানা আছে।
এই মাসে বিয়া দিয়া বেউলা[৪] রাঢ়ি[৫] হইছে॥
ভাদ্র মাসে শাস্ত্রমতে দেবকার্য্য মানা।
এই মাসে না হইল বিয়া কেবল আনাগুনা॥
আশ্বিন মাসেতে দেখ দুর্গাপূজা দেশে।
এও মাস গেল বাপের পূজার আন্দেসে[৬]॥
কার্ত্তিক মাসেতে পাইৰ কার্ত্তিকসমান বর।
মন নাহি উঠে বাপের আইল যত ঘর॥
আগণ[৭] মাসে রাঙ্গা ধান জমীনে ফলে সোনা।
রাঙ্গা জামাই ঘরে আনতে বাপের হইল মানা॥
পৌষ মাসে পোষা আন্ধি দেশাচারে দোষ।
এই মাস গেলে হইব বিয়ার সন্তোষ॥
পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
মৈমনসিংহ—গীতিকা