পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মলুয়া
৯৫

সেও সাধে বিধাতা মোর উড়াইল ছাই।
জীবন রাখিতে মোর আর ইচ্ছা নাই॥
আগুনে পশিব আমি প্রভু কোলে লইয়া৷
জলেতে ডুৰিব আমি সকল ছাড়িয়া॥
হিজল গাছের ডালে টাঙ্গাইৰ ফাঁসী।
হাম অভাগী নারী কোন বা দোষের দোষী॥

খবর পাইয়া পঞ্চ ভাই আসিলেক ধাইয়া।
পঞ্চ ভাই কান্দে বসি মরা কোলে লইয়া॥
মুখের লাল বাইয়া পরে চক্ষের মণি ধুয়া[১]
“কেমন কইরা কাটাইলে আমাদের মায়া॥
পঞ্চ ভাইয়ের বইনে সইপ্যা দিলাম তোমার করে
রাড়ী হইয়া বইন আমার কেমনে থাকবে ঘরে॥
তিন দোষে দোষী বইন সেও ছিল ভালা।
রাড়ী হইয়া সইব কেমনে কালবিষের জ্বালা॥
হাতেতে সোণার শঙ্ক কেমনে ভাঙ্গিব।
দুঃখের বদন বইনের কেমনে দেখিব॥”

“না কাইন্দ না কাইন্দ ভাই আমার কথা শুন।
পরীখাইয়া[২] দেখি একবার আছে কিনা প্রাণ॥
ঘাটেতে আছে বাঁধা মন পবনের নাও।
শীঘ্র লইয়া তারে ওঝার বাড়ী যাও॥”

পাচ ভাইয়ে পাচ দাড় নায়েতে উঠিল।
মরা স্বামী কোলে লইয়া মলুয়া বসিল॥
গাড়রী[৩] ওঝার বাড়ী সাত দিনের আড়ি[৪]
এক দিনে গেল মলুয়া গাড়রীর বাড়ী।
নাকমুখ দেইখ্যা ওঝা মাথায় থাপা[৫] দিল।
বুকেতে আনিয়া বিষ কোমরে নামাইল॥

  1. ধুয়া=ঘোলা।
  2. পরীখাইয়া=পরীক্ষা করিয়া।
  3. গাড়রী=‘গরুড়’ উপাধি সাপের ওঝারা ব্যবহার করিতেন।
  4. আড়ি=পথ।
  5. থাপা=থাবা, থাপ্পর।